পটিয়ায় ৪০টির অধিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকবিহীন
পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে সেলিম চৌধুরী
পটিয়া উপজেলার ৪০টির অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চললেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ নিয়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির। এদিকে ৬ মাসের ছুটি নিয়ে উপজেলার কোলাগাঁও চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯ মাস ধরে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতি কনা দাশ। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে ২ বার শোকজ করা হলেও এখনো পর্যন্ত নেয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদায়নের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কয়েকবার অবহিত করলেও কোন কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় সর্বমোট ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়েল মধ্যে ৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষক না থাকায় এসব স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে দূরঅবস্থা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার কোলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম প্রধান শিক্ষক পদায়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কয়েকবার অবহিত করেও কোন ফল না পাওয়ায় আল্টিমেটাম দিয়েছেন। যদি শীগ্রই চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা না হয় তাহলে তিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এ বিদ্যালয়ের মতোই চলছে উপজেলার ৪৩টি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। আবার অনেক ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম শহরে আসা যাওয়ার সুবিধার্থে পছন্দনীয় স্কুলে বদলি হয়। বিশেষ করে গ্রাম এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকদের পদ খালি বেশি। সাধারণ শিক্ষকের বেলাও ঠিক একই। গ্রাম এলাকাগুলোতে কেউ পোস্টিং নিতে চাই না। শহর অঞ্চল এবং পৌরসভার আশে পাশের স্কুলগুলোতেই শিক্ষকরা পোস্টিং নিতে আগ্রহী হয়। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চলছে না বলে কয়েকজন অভিভাবক সূত্রে জানিয়েছে।
এদিকে চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতি কনা বিশ্বাস চিকিৎসা জনিত কারন দেখিয়ে ৬ মাসের ছুটি নিলেও ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০১৭ সালের চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ মাস অনুপস্থিত। এ বিদ্যালয়ে ২০০৬ সালে যোগদান করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তিনি। তার স্বামী গত দুই বছর আগে কাস্টমস অফিসার হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে মূলত এ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে ২ বার শোকজ করা হয়েছে এবং শেষ বারের মতো সতর্ক করতে আরেকটি শোকজ তৈরি করা হয়েছে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতি কনা দাশের অনুপস্থিতিতে ঐ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাহানারা বেগম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোতাহের বিল্লাহ জানান, প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতি কনা দাশকে ইতিমধ্যে ২টি শোকজ করা হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। সতর্ক করতে তৃতীয় শোকজটি তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে ঐ প্রধান শিক্ষিকাকে। প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতি কনা দাশ বলেন, তিনি চিকিৎসা জনিত কারনে ছুটিতে ছিলেন। তাকে দুবার শোকজ করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনি ইতিমধ্যে চাকরি থেকে রিজাইন দিয়েছেন। তিনি প্রতিবেদকে নিউজ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রিজাউন দেয়ায় পদটি খালি হবে। সে পদে অন্য কাউকে পদায়ন করবে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও চাপড়া সরকারিু প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম বলেন, দীর্ঘ ১৯ মাস বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
আমি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব নিয়েছি ৬ মাস পূর্বে। তার আগেও প্রধান শিক্ষক ছিল না। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষক পদায়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বশে কয়েকবার অবহিত করা হলেও কোন কর্ণপাত করেনি। তিনি বলেন, তিনি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব রয়েছেন। সরকারি তহবিলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ করলেও প্রধান শিক্ষক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদায়ের দাবী জানান।
এব্যাপারে পটিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোতাহের বিল্লাহ বলেন, বিভিন্ন জটিলতায় প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন সরকার সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি দিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় যেখানে প্রধান শিক্ষক নেই সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই চট্টগ্রামেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও পটিয়ায় সেসব স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই সেসব স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।