জট খুলছে না যুক্তফ্রন্টের
রূপরেখার খসড়া তৈরি হলেও নানা জটিলতায় দেখছে না আলোর মুখ : বিএনপি'র সাথে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে দাবি ও লক্ষ্য নিয়ে চলছে দেনদরবার
বিশেষ প্রতিনিধি
নানা জনের নানা মতের কারণে কিছুটা থমকে গেছে যুক্তফ্রন্ট। ইতোমধ্যে রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হলেও নানা জটিলতায় আলোর মুখ দেখছে না। যদিও যুক্তফ্রন্টে সাথে বিএনপি'র জোটের নাম কি হবে তা নিয়েও চলছে টানাপেড়েন। আসনবণ্টন ও সরকার গঠন সম্পর্কে দেনদরবার চলছে যুক্তফ্রন্টের। ফলে সৃষ্ট এই জট খুলতে কিছুটা সময় লাগবে- এমনটাই ইঙ্গিত যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দায়িত্বশীলদের।
বিএনপি'র সাথে আসন্ন জোটের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট'। যদিও যুক্তফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা বলেছেন, এই জোটের নাম হতে পারে-'জাতীয় যুক্তফ্রন্ট'। তবে সবকিছুই প্রাথমিক প্রস্তাব। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই নির্ধারণ হবে নাম।
এদিকে, যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলছেন, বিএনপি'র সাথে আসনবণ্টন ও সরকার গঠনের বিষয়টি কীভাবে নিরূপিত হবে, এটা আগে পরিষ্কার করতে হবে। তারা ধারণা করছেন, ইতোমধ্যে বিএনপি'র সাথে ড. কামাল হোসেনের মতেক্য হয়েছে। ফলে, ঐক্যজোট আকারে নিজেদের জানান
দেয়া এখন সময়ের ব্যাপার।
বিএনপি'র সাথে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সম্ভাব্য জোটের রূপরেখা ও নামের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায়'।
যদিও যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিকল্প ধারা চাইছে, কোনোভাবেই বিএনপি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী না হোক। দ্বিতীয় দফায় যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তা থেকে না সরার ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ঐক্য কার্যকর করার পূর্বশর্ত বিএনপি'র পক্ষ থেকে আসনবণ্টন ও সরকার গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ও পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবেই দিতে হবে। তবে কবে নাগাদ বিএনপি নেতাদের সাথে সাথে বৈঠক হবে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বিএনপি নেতারা যে বৈঠকে অংশ নিয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরবেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সিনিয়র নেতাদের পক্ষ থেকে।
বিএনপি'র সিনিয়র ঐ নেতারা অবশ্য বলছেন, সবকিছু নির্ভর করবে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেভাবে চাইবেন সেভাবেই জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে বিএনপি।
যুক্তফ্রন্টের একাধিক দায়িত্বশীল জানান, গত ৮ অক্টোবর উত্তরার বৈঠকের শেষ দিকে মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের সাথে কথা কাটাকাটি হয় আ. স. ম আবদুর রবের। সেখানে বিএনপি'র সাথে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে দাবি-দাওয়া পূরণে আগেই ফায়সালা করার প্রস্তাব দেন মান্নান। এ বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনেও উপস্থাপনের প্রস্তাব দেন তিনি। এতে আপত্তি জানান আ স ম রব। তার যুক্তি, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি-দাওয়া আদায়ের পরই এ বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে।
যুক্তফ্রন্টের একাধিক নেতার দাবি, ঐ কথা কাটাকাটির পরই মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান পরবর্তী বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে, আব্দুল মান্নানের কাছে এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতার ধারণা, বিএনপি'র সাথে সম্ভাব্য এই ঐক্যে শেষ পর্যন্ত বিকল্প ধারা সরে পড়তে পারে।
জোট গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করা সম্ভব হলে কী কী করা হবে, এর একটি প্রাথমিক ধারণা দিতে চায় বিএনপিসহ জোটের বাকি অংশগ্রহণকারীরা। যুক্তফ্রন্ট নেতারা বলছেন, আসনবণ্টন ও সরকার গঠনের বিষয়টি কীভাবে নিরূপিত হবে, এটা আগে পরিষ্কার করতে হবে।
বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই বৈঠকে খসড়া চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলেও বিএনপি'র পক্ষ থেকে বিস্তারিত পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। বৈঠকে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা থাকতে পারেন।
এদিকে বিএনপি'র সাথে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সম্ভাব্য জোটের রূপরেখা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় ঐক্যপ্রক্রিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আগের দিন ১০ অক্টোবর যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর অব আবদুল মান্নান পরবর্তী বৈঠকে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। বৈঠকে অংশ নেয়া থেকে পিছিয়ে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও। এর আগে ঐদিন দুপুরেই খবর রটে যায়, ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক হচ্ছে না। বৈঠক হবে রাত ৯টায় উত্তরায় আ স ম আবদুর রবের বাসায়। তবে, ঐ বৈঠকে যাচ্ছেন না ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী। নতুন তথ্য আসে আ স ম রবের বাসার বৈঠকে যাচ্ছেন মাহী বি চৌধুরী। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ১০টা পর্যন্ত আ স ম রবের বাসায় বৈঠক হওয়া নিয়েও ঐক্যপ্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত নেতাদের মধ্যে দোলাচাল দেখা গেছে। বৈঠকটি আদৌ অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত কোনও নেতা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি। এবিষয়ে জানতে চাইলে মাহী বি. চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, আমি আ স ম রবের বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। বৈঠকে উপস্থিত থাকবো। তবে তিনি বলেন, রাতের বৈঠকে বি. চৌধুরী ও দলের মহাসচিব আব্দুল মান্নানের যাওয়া অনিশ্চিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বৈঠকের স্থান-পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। রাতে রব ভাইয়ের বাসায় বৈঠক হচ্ছে, সেখানে আমি যাবো। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সিনিয়র লেভেলে। কিন্তু বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠক হবে, আলোচনা আরও বাকি আছে। প্রাথমিক কাজগুলো শেষ হওয়ার পর সিনিয়র নেতারা বসবেন।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।