অনেক দিন পর প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁইয়ের একটা গান মনে পড়ছে। তিনি খুব আবেগী কণ্ঠে গাইতেন_ 'এক সেকেন্ডের নাই ভরসা, বন্ধ হবে রঙ তামাশা দম ফুরাইলে।' গানটিতে দেহ তত্ত্বের বিশ্লেষণে মানবজীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা বলা হয়েছে। তাত্তি্বক ভাবনায়_ দম ফুরাইলে যেমন মানবজীবনের ইতি। তেমনই সমাজ জীবনে দম রূপী ক্ষমতারও এক সময় অবসান ঘটে। অর্থাৎ নশ্বর এই পৃথিবীতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। অথচ দুদিনের
জীবন আর ক্ষমতার অহমিকায় মানুষ দুনিয়ার অনিবার্য নিয়মকে উপেক্ষা করে চলতে কতই না উদাসীন! মানবজীবনের অকাট্য বাস্তবতার নিরিখেই গানটির বিষয়বস্তু রচিত। বর্তমান বাস্তবতা তাই গানটিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
আমাদের সমাজে যখন যারা মসনদে থাকেন, তারা হয়তো ভাবেন-মসনদ চিরকালের জন্য তাদের। হয়তো জনতার রায়কেও তারা
গুরুত্ব দেন না। জনগণকে যদি কেউ তোয়াক্কা না করে, তবে তা ভিন্ন কথা। কিন্তু কোনো জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে তা সমীচীন নয়।
ক্ষমতার মসনদ খুবই ক্ষণস্থায়ী। প্রজাবৎসল প্রতিনিধিকেও এক সময় মসনদ ত্যাগ করতে হয়। আবার স্বেচ্ছাচারী কোনো শাসকও চিরস্থায়ী হয় না। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে_ ক্ষমতা হারানোর পরেও ভালো কাজের জন্য কেউ পায় সুনাম, সুখ্যাতি। প্রজাকুল তার স্মৃতিচারণে স্মরণ করে সম্মানিত সূচক। আর কেউ তার অপকর্মের জন্য পায় অভিশাপ, অবজ্ঞা। স্বেচ্চাচারী শাসকের অপসারণে প্রজাসাধারণকে উল্লাসও করতে দেখা যায়। সবই বাস্তবতা।
পুনশ্চ: মানুষ কেন যে সব কিছুকে স্থায়ী রূপ দিতে চায়! স্থায়ী তো কেবল মহান আল্লাহতায়ালা। বাকি সবই নশ্বর, ক্ষণস্থায়ী। আজ যা বাস্তব, কাল তা অতীত, পরশু তা ইতিহাস। যাপিত জীবনে যে যা করবে তা-ই তার জন্য থাকবে ইতিহাস হয়ে, যে ইতিহাস তার কর্মের সাক্ষী।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।