স্বাভাবিকভাবে আবেদনের ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট সরবরাহের নিয়ম। কিন্তু এই পাসপোর্ট ৩ মাসেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে আবেদনকারীদের। প্রতিদিন ঢাকা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোতে হাজার হাজার আবেদনকারী ধরনা দিয়ে ফেরত যাচ্ছেন। সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বিদেশ গমনেচ্ছু, শিক্ষার্থী এবং রোগীরা। ঢাকা অফিস থেকে যদিও কিছু কিছু পাসপোর্ট সরবরাহ করা হচ্ছে কিন্তু আঞ্চলিক অফিসগুলোতে এই সঙ্কট চরমে। সেখানকার গ্রাহকরা আঞ্চলিক অফিস ও ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করেও পাসপোর্ট না পাওয়ায় দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।
জানা যায়, ই-পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বইয়ের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই মাসে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা ছিল। তাই এটাকে কেন্দ্র করে এমআরপি বই একটা সময় ধরে মজুদ করা হয়েছিল। কিন্তু ই-পাসপোর্ট জুলাইয়ের পরিবর্তে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। এখন শোনা যাচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন হতে পারে। এ কারণে আগস্ট মাস থেকে সারাদেশে পাসপোর্ট বইয়ের চরম সঙ্কট দেখা দেয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্টের সঙ্কট মোকাবিলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ এমআরপি বই আমদানি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব বই ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তরও হয়েছে।
একসময় হাতে লেখা পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করার সুযোগ ছিল। ১৯৮০ সালের পর উন্নত বিশ্বে চালু হয় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি। বাংলাদেশে এমআরপি চালু হয় ২০১০ সালে। দেশে যখন এমআরপি চালু হচ্ছে তখন উন্নত বিশ্বে ইলেকট্রনিঙ্ পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোতে ২০০৮ সাল থেকে ই-পাসপোর্ট চলে আসছে। বর্তমানে ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু করার জন্য ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ই-পাসপোর্ট চালুর ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পরে চুক্তি হয়। তারা গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু করবে বলে কথা দিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে জার্মানি থেকে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট ছাপিয়ে আনার পর বাকিগুলো ঢাকার উত্তরায় ছাপানোর কথা। জার্মানি থেকে ই-পাসপোর্টের গেটসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে ডিসেম্বরের পরিবর্তে গত জানুয়ারিতে ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তা-ও ব্যর্থ হওয়ার পর বলা হয় জুন মাসে চালু হবে। এরপর বলা হয়, জুলাইয়ে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু হয়নি। এখন বলা হচ্ছে চলতি বছরের মধ্যে চালু হবে। তবে শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। দেশে পাসপোর্টের বই ছাপানো হয় না। ডে লা রো নামের কোম্পানি ছাপিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি করে। বিদেশ থেকে আসা বইয়ে প্রয়োজনীয় নাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য ছাপিয়ে পাসপোর্ট দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। অধিদপ্তর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪ লাখ পাসপোর্ট ইস্যু হয়। সে হিসাব অনুযায়ী এই ২০ লাখ পাসপোর্ট বই দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত চলার কথা। এর মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু না হলে আবার পাসপোর্টের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। পাসপোর্ট অধিপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু হলে তখন এমআরপি পাসপোর্ট বইয়ের উপর চাপ কমে আসবে। যার ফলে গ্রাহকদের পাসপোর্ট পেতে আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ই-পাসপোর্টেও এমআরপির মতো বই থাকবে। তবে এমআরপি পাসপোর্টের শুরুতে ব্যক্তির তথ্য সংবলিত যে ২টি পাতা আছে তা ই-পাসপোর্টে থাকবে না। সেখানে পলিমারের তৈরি বিশেষ একটি কার্ড থাকবে। ওই কার্ডে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রো প্রসেসর চিপ থাকবে। এই চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে পাবলিক কি ডাইরেক্টরিতে (পিকেডি) সংরক্ষিত থাকবে। পিকেডিতে আন্তর্জাতিক এই তথ্যভা-ার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের এই তথ্যভা-ারে ঢুকে তথ্য যাচাই করার সুযোগ রয়েছে। ফলে ই-পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি সম্ভব হবে না। এমআরপিতে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য আছে ৩৮টি। ই-পাসপোর্টে থাকছে ৪২টি।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।