ষোড়শ সংশোধনী : উত্তপ্ত সংসদ
সংসদ নিয়ে পর্যবেক্ষণ বাতিল করতে রিভিউ'র প্রস্তাব
সংসদ রিপোর্টার
ষোড়শ সংশোধনী আলট্রা ভার্স ঘোষণাকে বাতিল ও প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ সম্পর্কে যে অসাংবিধানিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, তা বাতিল করার জন্য মামলার রায় রিভিউ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতীয় সংসদ।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনে গতকাল সংসদে ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন জাসদের নির্বাহী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮)। প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সংবিধান ষোড়শ সংশোধনী আলট্রা ভার্স ঘোষণাকে বাতিল করার জন্য ও মামনীয় প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ সম্পর্কে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে অসাংবিধানিক, আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, তা বাতিল করার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বললেন- নির্বাহী বিভাগ শেষ, আইন বিভাগ শেষ, বিচারবিভাগ ডুবতে ডুবতে কোনোভাবে নাক উঁচিয়ে টিকে আছে। অর্থাৎ তিনি বলতে চাইলেন- বাংলাদেশ অকার্যকর রাষ্ট্র। নো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বিনয়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতিকে বলি, কথা কম বলা ভালো। অনেক পোড় খাওয়া লোক আমরা এখানে আছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ কত সুন্দরভাবে চলছে। এই রায় দিয়ে বিএনপিকে উৎফুল্ল করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তোফায়েল বলেন, প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন না। বললেন প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের পরেও সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটিতে ২ জন আর্মি অফিসার ছিলেন। সেই কোর্টের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে তুলনা করলেন! আজকে আমার অবাক লাগে, সংসদের গ্রন্থাগারে দেখলাম ১৯৫৩ সনে বেসিক প্রিন্সিপাল কমিটি গঠন হয়, সেই কমিটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিটি প্রস্তাব করে। '৫৬'র সংবিধানেও ছিল- সংসদ বিচারপতিদের অপসারণ করবে না। সেই আইয়ুব খানের আমলের কথা বলছেন প্রধান বিচারপতি! ষোড়শ সংশোধনীতে থাকা বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করলো। আমরা চাইলাম সবার মর্যাদা রাখতে।
তোফায়েল বলেন, আমরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদের কিংবা সংসদকে কেউ ছোট করে কথা বললে সমগ্র জাতিকেই ছোট করা হয়। সংসদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্বাভাবিকভাবেই আমরা দুঃখিত হই। এই সংসদে সর্বসম্মতিক্রম যত্নসহকারে আমরা এই সংশোধনী এনেছিলাম, '৭২'র মূল সংবিধানে ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, আদালতের বন্ধু অ্যামিকাস কিউরি তারা কারা। তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী। ড. কামাল আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে নিজে দল করেছেন। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আওয়ামী লীগের কেউ নন। রোকউদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টে একটা, আপিল বিভাগের আরেকটা বলেছেন। এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা কামাল, হাসান আরিফ, টিএইচ খান- এরা কারা? একমাত্র আজমালুল হোসেন কিউসি সংসদের পক্ষে কথা বলেছেন। আর কোনো লোক পাওয়া গেল না? এসব লোক দিয়ে সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে ড. কামাল বলেছেন-আমাদের সংবিধান শুরুই হয়েছে 'আমরা' দিয়ে। তিনি কি ভুলে গেছেন বঙ্গবন্ধু বলেছেন-আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না..., আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি...। বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশে কি বক্তৃতা করেছিলেন?
সংসদ কর্তৃক অপসারণের প্রস্তাব অধিকতর গণতান্ত্রিক। কারণ ৪০ বছরে একজন বিচারপতিও অপসারিত হননি।
এ প্রস্তাবের (সাধারণ) ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনি সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ব আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের সংবিধানের ৭ (১) এ পরিষ্কারভাবে বলা আছে, 'প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। কোন অধিকারে আপনি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করলেন? মার্শালকে আপনারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন, কিন্তু সেই আপনারাই কী করে মার্শাল আমলে প্রণীত আইনকে পুনর্বহাল করেন? তিনি আরও বলেন, পর্যবেক্ষণে আপনারা অনেক কথাই বলেছেন, যা বলার অধিকার আপনারও নেই। এ নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা, গুঞ্জন চলছে। এই সংসদ ব্যাপক আলোচনার নিরীখে এই অবস্থার অবসান চায়। যাতে গণবিরোধী শক্তির 'ঘোলা জলে মাছ শিকার'র প্রচেষ্টা গুঁড়িয়ে যায়। এছাড়া আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দলের ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ। পরে সর্বসম্মতিভাবে এই রেজুলেশনটি গৃহীত হয়। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।