সাগর পথে এখনো আসছে রোহিঙ্গারা
স্টাফ রিপোর্টার
মায়ানমারের মংডু উপজেলার নির্যাতিত অধিকাংশ মুসলিম রোহিঙ্গাই শাহপরী দ্বীপের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে পার হয়ে বাংলাদেশে আসছে। মায়ানমার সেনাবাহিনীর তান্ডবে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। রোহিঙ্গারা কঙ্বাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরসহ খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। মায়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিপীড়নে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার রোহিঙ্গা মারা গেছে।
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে গতকাল বুধবার জরুরি বৈঠকে করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, মায়ানমারের মংডু উপজেলার নির্যাতিত অধিকাংশ মুসলিম রোহিঙ্গাই শাহপরী দ্বীপের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে পার হয়ে বাংলাদেশে আসছে। সারা রাত অপেক্ষা করে যারা পার হতে পারেননি, সেইসব রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন ভাটার টানেও। শাহপরী দ্বীপের ঘাট হয়ে হাজারও রোহিঙ্গা প্রবেশ করে গতকাল বুধবার ভোরেও। নৌকা থেকে কোমরসম সাগর পানিতে নেমে যখন ওরা তীরে ভিড়ছিল, তখন মনে হচ্ছিল ঠিক যেনো সাগর থেকে ওঠে আসছিল রোহিঙ্গারা। ভোরের সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গা নারীরা যখন তীরে পা ফেলছিল, তা দেখে মনে হচ্ছিল ওরা-ই সাগরকন্যা।
তবে সূর্যের তেজের সঙ্গে ওদের কোনো মিল ছিল না। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শরীর আর চলছিল না। ঘর পুড়িয়ে রোহিঙ্গাদের মনও পুড়িয়ে দিয়েছে মায়ানমারের বৌদ্ধরা। স্বজন হারিয়ে মনের দগদগে ক্ষত প্রকাশ পাচ্ছিল চোখে-মুখে। আরকান প্রদেশের মংডু উপজেলার গজনদিয়া গ্রাম থেকে তিন দিন হেঁটে এসে নাফ নদীর ওপারে অপেক্ষা করছিল জোহরা বেগম। সত্তর বয়সী এ বৃদ্ধা ও তার পরিবার সারা রাত অপেক্ষা শেষে ভোরে এপারে আসেন। নদী পারাপারে প্রতিজনকে দিতে হয়েছে তিন হাজার করে বাংলাদেশি টাকা। তিনি বলেন, গ্রামের বহু মানুষকে হত্যা করেছে মগ বৌদ্ধরা। গ্রামে মুসলামনদের সব ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিন দিনে দু'বেলা শুকনো খাবার মিলেছিল। রাত থেকে অনাহারে। ছোট বাচ্চারাও কিছু খেতে পায়নি। তবুও জীবন নিয়ে এপারে আসতে পেরেছি বলে শুকরিয়া।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।