নানা উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি। স্বাস্থ্য খাতের ওসব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বেড বাড়ানোর অনুমোদনের আগেই বাড়তি রোগী ভর্তি করা হয়। মূলত স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্তরাই অনুমোদন ও পরিদর্শনের নামে নানা সুবিধা নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে অনিয়ম করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি সরকারি সংস্থা রাজধানীর একাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অনুসন্ধান চালিয়ে ওসব অনিয়ম উদঘাটন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিফতরের একটি মহল নানাভাবে অনিয়মের মাধ্যমে ক্লিনিকগুলোর অনুমোদন দেয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান সত্ত্বেও থামছে না অনিয়ম ও দুর্নীতি। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর মহাখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালের ৭০টি বেডের অনুমোদন রয়েছে। সম্প্রতি ওই হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১১০ বেডের উন্নীত করার অনুমোদন চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছে। কিন্তু সরেজমিনে তদন্তে দেখা গেছে অনুমোদনের আগেই ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১১০ বেডের ব্যবহার করছে। রাজধানীর শ্যামলীতে একটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি ও চক্ষু চিকিৎসার অনুমোদন থাকলেও হাসপাতালটি তার বাইরে ডায়ালাইসিসসহ কিডনি চিকিৎসা এবং আইসিইউ স্থাপন করেছে।। মোহাম্মদপুরের একটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতালে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অন্য কোন অনুমোদন নেই। মিরপুরে একটি হাসপাতালে ৫০ বেডের অনুমোদন থাকলেও হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৬০ বেড রয়েছে। এভাবে বহু হাসপাতালেই চলছে অনিয়ম। অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা কর্তৃক প্রয়োজনীয় লোকবল সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতাল, ক্লিনিকের অনুমোদন ও নবায়নের অন্যতম শর্ত হিসেবে সরেজমিনে পরিদর্শন ও অন্যান্য শর্ত ছাড়াই অনৈতিকভাবে শুধু আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অধিকাংশ ছোটখাটো প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যার কারণে শর্ত ও নীতিমালা অনেক হাসপাতালে অনুসৃত হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের কারণে রাজধানীর একাধিক নামিদামি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছে। তারপরও থামছে না অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণা। গতবছরের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর হাতিরপুলে একটি জেনারেল হাসপাতালের এনআইসিইউ পরিচালনার সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও এনআইসিইউ বাণিজ্য এবং মৃত রোগীকে ভর্তি রেখে টাকা আদায়সহ অনিয়মের অভিযোগে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রাজধানীর ঝিগাতলা একটি নামিদামি হাসপাতালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত নানা অনিয়মের অভিযোগে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। তাছাড়া গতবছরের ৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে ১ বছর ৪ মাস বয়সের একটি শিশুকে আইসিইউ রুমে মারা গেলেও শিশুটিতে জীবিত দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসার নামে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি অনভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা শিশু রোগের চিকিৎসা করা, মেডিকেল বোর্ড গঠনের কোন ব্যবস্থা না থাকা, বিভিন্ন রোগের টেস্টে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করা, ১২ ধরনের এন্টিবায়োটিকসহ অননুমোদিত ওষুধ বিক্রিসহ নানা অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে। র্যাব এভাবে জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নার্সিংহোমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম উদঘাটন করে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিইউ নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। এটা নিয়ে ব্যবসা করার মনোভাব থাকা ঠিক নয়। আইসিইউ নিয়ে আলাদা টিমও থাকা দরকার। আইসিইউর জন্য সব সুযোগ-সুবিধা না থাকলে অনুমোদন দেয়া ঠিক না। আর কিডনি, ডায়ালাইসিস অনুমোদন না থাকলেও নানা কৌশলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসব কিছু একটি নিয়মে থাকা দরকার। যারা নিয়ম মানছে না তারা অপরাধ করছে। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা নাহলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় প্রতারণার হয়রানি থেকে রেহাই পাবে না।
অন্যদিকে এ সম্পর্কে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের এডিজি প্রশাসন ডা. ইহতেশামুল হক জানান, অনিয়মের মাধ্যমে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বেড সংখ্যা বাড়ানো, শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল ও আইসিইউ চালু করা সবই বেআইনি। এগুলো যারা করছে তারা মারাত্মক অপরাধ করছে। তাদের বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।