গোদাগাড়ীতে পুকুর কাটা বিষয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাও মানছে না
রাজশাহী থেকে নাজিম হাসান
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও তার ভাই জারজিস অবৈধভাবে পুকুর কেটেছে। এর ফলে ঐ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন অর্থদ-ও করে। তারা মুচলেকা দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে পুকুর পাড় অপসারণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত এপ্রিলে রক্ষা পান। কিন্তু এখনো পুকুর পাড়টি অপসারণ তারা করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোলাম রব্বানী চলতি বছরের শুরুতে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পৌর এলাকার চকবোনাই মৌজায় ২৫০, ২৫৩ ও ২৫৪ দাগের ওপরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ধানি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন শুরু করেন। এই জমির পাশে পৌর এলাকার পাঁচগাছিয়া মহল্লার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুনের ১ বিঘা ২ কাঠা ধানি জমি রয়েছে। গোলাম রব্বানী এমনভাবে পুকুরের পাড় নির্মাণ করছেন, যাতে চকবোনাই, হাটপানিয়া ও জয়রামপুর মৌজার সব পানি সুফিয়া খাতুনের জমির ওপর দিয়ে গড়িয়ে যাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি ধানি জমিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে সুফিয়া খাতুনের পক্ষে তার ভাই আব্দুস শুকুর ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে গোলাম রব্বানী ও তার ভাই জারজিস আলীকে প্রতিপক্ষ করা হয়। লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে গোলাম রব্বানী ও তার ভাই জারজিস আলীকে নোটিশ দেয়া হয়। তাদের ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সাক্ষ্য-প্রমাণাদিসহ সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। কিন্তু গোলাম রব্বানী শুনানির আগের দিন স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে হাত রেখে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরদিন তিনি আর সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হননি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে গোলাম রব্বানী তার পুকুর খনন সম্পন্ন করেছেন। সুফিয়ার ভাই আব্দুস শুকুর বলেন, তার বোনের ঐ একখ-ই আবাদি জামি। তার ভগি্নপতি দিনমজুর। দুটি মেয়ে পড়াশোনা করে। তাদের খরচ জোগাড় করতে হয়। গোলাম রব্বানীর কাছে শেষ পর্যন্ত তিনি তার পুকুরের পশ্চিম দিক দিয়ে পানি নামার জন্য জায়গা ছেড়ে পুকুরের পাড় তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি অনুরোধ রাখেননি। এমনভাবে পুকুরের পাড় তৈরি করা হয়েছে, তার বোনের জমি ছাড়া আর কোনো দিক দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার জায়গা নেই। বর্ষাকালে তিনটি মৌজার পানির তোড়ে ঐ জমিতে রোপণ করা ধানের চারা ভেসে যাবে। এদিকে গত ২১ আগস্ট আব্দুর রউফ নামে আরো এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় রাব্বানী ও জারজিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঐ অবৈধ পুুকুরের পাড়ের জন্য তার রোপা আমন খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ইউএনও জাহিদ নেওয়াজ বলেন, গত এপ্রিলে অভিযুক্তদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।