জনতার মত
অধিকার বঞ্চিত শিশুরা শৈশবকে হত্যা করছে
মো. শামীম মিয়া
শিশুদের হাসি আমাদের আনন্দের জোয়ার এনে দেয়। যাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি আকাশের চেয়ে বিশাল, সমুদ্রের চেয়েও গভীর, সুন্দর একটি সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীর। একটি শিশু, একটি সমাজের রঙিন ঘুড়ি। মানুষের জন্য সে হবে রাহবার। তার চারিত্রিক গুণাবলীর মাধ্যমে সত্যের আলো ছড়াবে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মানুষের হৃদয়ে। অন্ধকার সমাজে প্রজ্বলিত করবে মুক্তির আলো, পথভোলা দিকভ্রান্ত মানুষকে সত্যের পথ, মুক্তির পথ, হতাশায় ডুবন্ত জাতিকে তুলে আনবে আশার আলোর রঙিন ঠিকানায়। আজ সেই শিশুদের একটি অংশ আমাদের অবহেলায় পতিত। তারা শিশু বয়সে তাদের শৈশবকে হত্যা করে চলেছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। এরা গরিব অসহায় অতিদরিদ্র পিতৃ-মাতৃহীন অধিকার বঞ্চিত শিশু। সব শিশুর স্বাভাবিক ও সুন্দর শৈশবের নিশ্চয়তা জন্মগত অধিকার খাতা কলমে থাকলেও বাস্তবতা সত্যি করুণ। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা শুধু শ্রমেই নয় বরং বিপুলসংখ্যক শিশু সমাজ বিরোধী চক্রের সাথে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, প্রতিনিয়তই শুধু বেঁচে থাকার নিদারুণ অভিলাষে। দু'মুঠো ভাত খাওয়ার প্রত্যাশায়। পূর্ণ প্রষ্ফুটিত হওয়ার আগেই পথও প্রান্তে এই পুষ্পগুলো নিঃশব্দে ঝড়ে যায়। যে শিশুরা আগামী দিনের স্বপ্ন, স্বার্থকতা। তাদের জীবনের পরিণতি করুণ। মর্মন্তুত্মদ ও বেদনাসিক্ত দুঃখ-কষ্ট বঞ্চনার কত অভিশাপ। প্রতিটি মানুষই চায় তার জীবন হক সুন্দর এবং মুহূর্তগুলো হক আনন্দদায়ক। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আমাদের প্রকৃতি যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর মানুষের জীবন মানুষের স্বপ্ন। তবুও কিছু স্বপ্ন হয়ে যায় কেন যেন রংহীন, বর্ণহীন। বর্তমান সরকারের আমলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। এই উন্নয়নের সাথে জড়িয়ে আছে সরকারের সদিচ্ছা ও বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার এক কঠোর সংকল্প। যা আমাদের জাতির জন্য সুখবর ও আনন্দের। তবে শিশুশ্রম রোধে আমরা অনেক পিছিয়েই রয়েছি। গুণিজনরা বলেন, শিশুশ্রম হলো সামাজিক শোষণের দীর্ঘস্থায়ী এক হাতিয়ার। যে কোনো দেশের শিশুশ্রম দেশকে উন্নয়নে কতটা পিছিয়ে দেয় তা তার নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়। সরকার ইউনিসেফসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন আপোসহীনভাবে কাজ করছে শিশুশ্রম রোধে। তবুও রোধ করা যাচ্ছে না শিশুশ্রম, শিশু র্নিযাতন, শোষণ ইত্যাদি। শিশুদের অধিকার, শিশুদের নির্যাতন, তথা শিশুদের খারাপ কাজ থেকে রক্ষা করা বা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্য, অবহেলা রোধ করার জন্য, শিশু উন্নয়নের জন্য অসংখ্য আইন করেছেন সরকার। কিন্তু সমস্যা একটাই; প্রয়োগের । আমি মনে করি, এই ভবিষ্যৎ প্রবক্তাদের চোখে মুখে যদি আমরা আলোর রেণু এঁকে দিতে চাই তাহলে সবার আগে তাদের উপযোগী পৃথিবী আমাদের গড়ে দিতে হবে। তাদের বেড়ে উঠতে দিতে হবে অনুকূল পরিবেশে। আমি নিজেই একজন শিশু শ্রমিক। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি শিশুশ্রম রোধে কেবল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা সরকারের পক্ষে এককভাবে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, পেশাজীবী সুশীল সমাজ, নীতি-নির্ধারক, সাংবাদিক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সবার সম্মিলিত প্রয়াসই পারে আজকের অবহেলিত শিশুদের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে অনুকূল পরিবেশে আনতে।
মো. শামীম মিয়া : লেখক
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।