সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানায় শত কোটি টাকার মেশিনপত্র অকেজো
নীলফামারী প্রতিনিধি
জনবল সংকট, জরাজীর্ণ অবকাঠামো আর উৎপাদন বন্ধের কারণে ব্রিটিশ সরকারের হাতে গড়া সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানাটির বেহাল দশায় পড়েছে। এর অভ্যন্তরে তিনটি উপকারখানার প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের মেশিনপত্র বিকল হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ১৮৭০ সালে সৈয়দপুর শহরের উত্তরাংশে প্রায় ১১০ একর ভূমির উপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি স্থাপন করেন ব্রিটিশ সরকার। ওই সময় থেকে ট্রেন ও রেললাইনের সকল যন্ত্রাংশ এ কারখানায় তৈরি করা হতো। তবে রেলপথ ও এর ওপরে ছোট-বড় সেতু তৈরি ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় নাট-বোল্ট থেকে বৃহৎ যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য এর কারখানা সংলগ্ন ১৮ একর ভূমিতে পৃথকভাবে রেলওয়ে সেতু কারখানাটিও স্থাপন করা হয়। সেতু কারখানায় মেশিন উপ-কারখানা (শপ), পয়েন্টস এন্ড ক্রসিং ও গাডার ইয়ার্ড নামে তিনটি কারখানায় প্রায় শত শত শ্রমিক কাজ করত। তবে এখন আর এসব উপ-কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধের পথে। এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, আগে কর্মচাঞ্চল্যে ভরে ছিল এ কারখানার সকল শপ।
১২৭ জন মঞ্জুরিকৃত পদে বর্তমান ২ জন অফিসে ও ১৮ জন শপের কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ফোরম্যান থাকলেও কয়েকমাস আগে তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। আর অভিভাবক হিসেবে রেলওয়ের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আহসান উদ্দিনকে অতিরিক্ত সহকারী সেতু প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে কোনো কাজ নেই। তারা আরো জানান, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও নিয়মিত অবসরের কারণে এ অফিস আগামী ২ বছরের মধ্যে তালাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেতু কারখানার অফিস সহকারী আশরাফ আলী জানান, এ কারখানার জনবল ও অন্যান্য সংকট বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ আমাদেরও অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে। সরেজমিনে এ সেতু কারখানা ঘুরে দেখা যায়, পুরো কারখানাজুড়ে তিন ফুট উঁচু জঙ্গলে সবুজ চাদরে ঢেকে গেছে। এর ওপর রাখা হয়েছে তিস্তা ও পাকশি হার্ডিঞ্জ সেতুর পরিত্যক্ত লোহা-লক্কর। একটি বিকল স্টিম ক্রেন যা ঘাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। মেশিন শপের সাথে প্লাট ফরম শেড বা নকশা ঘর এতে ৯টি টুলবঙ্, ইয়ার কমপ্রেসার তিনটি জরাজীর্ণ অফিস ঘর। বিশাল উচ্চতার জীর্ণ শেড অবকাঠামো।
এর মেজেতে সারিবদ্ধ ৫টি বৃহৎ এয়ার কমপ্রেসার, ৩টি ওয়েল্ডিং প্লান্ট, উইন্স ক্রাব, ডাইচ তিনটা, লেদ ২টি, প্লেনিং ২টি। পয়েন্টস এন্ড ক্রসিং শপে এঙ্পাঞ্জ সুইস বা টাংরেল, ৬০ হর্সের বিদ্যুৎ সম্পন্ন বেল্ড ড্রাইভ ২টি। গাডার ইয়ার্ডে আসানো শেয়ারিং মেশিন, শেয়ারিং পাঞ্চ মেশিন, ১টি ড্রিল মেশিন উইন্স ক্রাব মেশিন যা পাইলিং কাজে ব্যবহার করা হয়, রাশিয়ান এয়ার কমপ্রেসার ও বৃহৎ এয়ার কমপ্রেসার। সবমিলে উৎপাদন শূন্যতায় প্রায় ৩৫টি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি হেয়ার মেশিন সচল করে অনেক সময় উৎপাদন কাজ করা হতো। এ সকল মেশিনের মধ্যে ১টি লেদ মেশিনের গায়ে দেখা যায় ১৯১৫ সালের তৈরি। বর্তমান এ সকল মেশিন অত্যন্ত ব্যয়বহুল যার মূল্য প্রায় শতাধিক কোটি টাকা।
একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন ২০১২ সালে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর রেল কারখানার ২৪টি উপ-কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ করে। তবে সেতু কারখানা মেরামত করা হয়নি। এতে দীর্ঘ দেড়শ বছরের কারখানার অবকাঠামোর বেহাল অবস্থা হয়েছে। বর্তমানে রেলপথের উন্নয়ন কর্মকা-ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ায় সেতু কারখানার কর্মকা-ে স্থবিরতা বিরাজ করছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে এই কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণা হতে পারে। জানতে চাইলে সেতু কারখানার অতিরিক্ত সহকারী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।