জনতার মত
টুঙ্গিপাড়ায় গড়ে তোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র
লিয়াকত হোসেন খোকন
মধুমতি তীরে গোপালগঞ্জ- এই জেলার জেলা সদর থেকে ১৯ কিমি দূরে টঙ্গীপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । এই গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছিল। এদিকে গোটা দেশজুড়ে সেস্নাগান উঠল : 'আগরতলার মিথ্যা মামলা মানি না- শেখ মুজিবের মুক্তি চাই।' টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার বঙ্গবন্ধুর বাড়ি দেখতে গিয়ে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বারবার মনে পড়বে। টুঙ্গীপাড়া নির্জন নিরিবিলি এক উপজেলা শহর। এখানে চারদিকে গাছগাছালি, খাল ও বিল চোখে পড়বে। শরৎকালে বিলের পাশে দাঁড়ালে কাশবনও দেখা হবে। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখে টুঙ্গীপাড়ায় বারবার খুঁজে পাবেন শরৎ ঋতুর প্রতিচ্ছবি। যেদিকেই যান না কেন, টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারের কাছে বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে হবে। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালির কথা মনে পড়তেই বুকটা ভরে যাবে। বঙ্গবন্ধুর মাজার কমপ্লেঙ্ েরয়েছে সুবিশাল আঙিনা, মসজিদ, লাইব্রেরি, প্রদর্শনীকেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ। টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার দেখতে গিয়ে তার ঐতিহাসিক ভাষণের কথাও মনে পড়বে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লাখ লাখ জনতার উদ্দেশ্যে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, 'ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা-কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' বস্তুত এ ভাষণের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানেই এদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং আমরা একদিন দেশকে শত্রুমুক্ত করি। মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত গোপালগঞ্জ জেলা শহর। গোপালগঞ্জ জেলা শহরের রয়েছে এক প্রাচীন ইতিহাস। দক্ষিণেশ্বরের রানি রাসমণির নাতি গোপালের নামানুসারে মধুমতি নদীর তীরসংলগ্ন এই ছোট গঞ্জের নাম রাখা হয় গোপালগঞ্জ। এ জেলার রাজনৈতিক ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
গোপালগঞ্জ জেলা মোট ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপজেলাগুলো হলো : গোপালগঞ্জ সদর, মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া, টুঙ্গীপাড়া ও কাশিয়ানী। এ জেলার আয়তন ১,৪৬৮.৭৪ বর্গকিলোমিটার।
গোপালগঞ্জ শহরের নামকরণ নিয়ে কাহিনী রয়েছে। রাজগঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ নাম হয়েছে যার নামে, তিনি কোনো কীর্তিমান ব্যক্তি ছিলেন না। 'গোপাল' এর নাম থেকে যে গোপালগঞ্জ নামের উৎপত্তি একথা সবাই বলেন। মুকিমপুর স্টেটের জমিদার ছিলেন রানি রাসমণি। তিনি বাস করতেন কলকাতায়। মাঝে মাঝে জমিদারি এলাকায় আসতেন। কলকাতা থেকে এখানে আসতে হতো পানসী বা বজরা নৌকা করে। একবার রানি রাসমণি তার আদরের নাতি গোপালকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। কলকাতা শহরে বড় হয়েছে গোপাল। বিল-হাওর-নদীর বিমুগ্ধ দৃশ্যের সঙ্গে তার কোনো পরিচয়ই ছিল না। রাজগঞ্জ ঘাটে পানসী থেকে নেমে গোপাল যেদিকে তাকাই সেদিকেই অন্তহীন প্রকৃতি দেখতে পায়। বিলে-ঝিলে শাপলা-শালুকের মেলা দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে সে। রামগঞ্জ এলাকাটিকে খুব ভালো লাগে গোপালের। রানি রাসমণি তার প্রিয় নাতির ভালোলাগার জায়গাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রাজগঞ্জের 'রাজ' শব্দটির স্থলে গোপালের নাম যুক্ত করে এলাকার নাম রাখেন 'গোগালগঞ্জ'। বিল-ঝিল রয়েছে এই উপজেলার অভ্যন্তরে। কোটালীপাড়ার পিঞ্জরী ইউনিয়নের শিকাদারবাড়িতে বহুতলা জামে মসজিদটি দেখার মতো। এটি আনুমানিক পঞ্চদশ শতকে নির্মিত হয়। তিনটি গম্বুজ রয়েছে এই মসজিদে। মসজিদটির নির্মাণশৈলী খুব আকর্ষণীয়। এটি প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন। কোটালীপাড়ার শিবমন্দিরটিও দেখার মতো। এটি সিদ্ধান্তবাড়ি নামক স্থানে অবস্থিত। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত, স্থানীয় লোকদের কাছে এটি 'পুড়া ঠাকুর' মন্দির নামে অধিক পরিচিত ছিল। প্রায় ২০০ বছর ধরে চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে এখানে নিয়মিত চৈত্র-সংক্রান্তির মেলা হয়ে আসছে। তাই অপরুপ এই গোপালগঞ্জেও গড়ে তোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র।
লিয়াকত হোসেন খোকন : লেখক