টিআইবি'র প্রতিবেদন
সংসদীয় কমিটিতে দলীয় প্রভাব
স্টাফ রিপোর্টার
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি উপেক্ষা করেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দলীয় প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া কমিটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সদস্যদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখা যায় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে 'বাংলাদেশে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যকরিতা: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।
প্রতিবেদন পাঠ করেন টিআইবি কর্মকর্তা ফাতেমা আফরোজ এবং জুলিয়েট রোজেটি।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান এবং নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হলফনামার তথ্য অনুযায়ী নবম সংসদের ৫১টি কমিটির মধ্যে ছয়টিতে এবং দশম সংসদের ৫০টি কমিটির মধ্যে পাঁচটিতে এক বা একাধিক সদস্যের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে। কেস হিসেব অন্তর্ভুক্ত ১১টি কমিটির ৩৮জন সদস্য সম্পর্কে (স্থানীয় পর্যায় থেকে) প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নয়টিতে ১৯জন সদস্যের সংশ্লিষ্ট ব্যবসা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদাধিকার বলে সদস্য হওয়ার কারণে এবং কোনো কোনো কমিটিতে আগের মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কমিটিকে ব্যবহার করে। কমিটির সিদ্ধান্তের একটি বড় অংশ বাস্তবায়িত হয় না। আরও দেখা যায় কমিটিতে দুর্নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত তুলনামূলকভাবে কম। কমিটির কার্যক্রমে সাচিবিক ও টেকনিক্যাল সহায়তায় ঘাটতি রয়েছে বলে দেখা যায়।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। কমিটির কার্যক্রম সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয় এবং কমিটি সম্পর্কিত তথ্য ও জনগণ পাচ্ছে না। এ ছাড়া কমিটির কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত পর্যায়ের।
আরও দেখা যায়, কমিটির কার্যক্রমের কোনো মূল্যায়ন কাঠামো নেই। বিভিন্ন কমিটি এবং দুইটি সংসদের মধ্যবর্তী সময়ের কার্যক্রমের সমন্বয়েরও ঘাটতি রয়েছে। কমিটিসমূহ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর না হওয়ার ফলে সরকারের জবাবদিহিতা প্রত্যাশিত পর্যায়ে নিশ্চিত হয় না, জনগণের সঙ্গে সংসদীয় কমিটির দূরত্ব তৈরি হয় এবং সার্বিকভাবে সংসদীয় কমিটির কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে টিআইবি'র ট্রাস্টি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমরা সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে পিছিয়ে আছি। আমাদের নির্বাচনি যে গণতন্ত্র ছিল তাও গেছে। গণতন্ত্রের অনেক কিছু্ই আমাদের এখানে বাস্তবায়ন নেই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকায় কার্যকর হচ্ছে না সংসদ ও স্থায়ী কমিটি। অন্য দেশে সংসদ নেতা, দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান এক ব্যক্তি হন না। আমাদের এখানে ব্যতিক্রম।