ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়কে যানজট দুর্ভোগ চরমে : চাপ পড়েছে ট্রেনে : অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে লঞ্চ
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে তাই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে কর্মসূত্রে রাজধানীতে থাকা বাসিন্দারা। বৃষ্টি, অতিরিক্ত ভাড়া এবং পথের নানা দুর্ভোগ নিয়েই বাস, ট্রেন ও লঞ্চযোগে ফিরছে তারা। ঈদযাত্রার আগেই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সড়কের খানাখন্দ, অবৈধ পার্কিং আর উন্নয়ন কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এ তিন মহাসড়কে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। এ অবস্থায় ঈদ যাত্রায় এসব মহাসড়কে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন ভোর থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে বিপুল যাত্রী সমাগম দেখা গেছে। বিগত দিনগুলোর তুলনায় এদিন কমলাপুরে যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। কমলাপুর স্টেশন থেকে মোট ৬৬টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অগ্রিম টিকেট ছাড়াও স্টেশন কাউন্টার থেকে টিকেট কিনতে পেরেছে যাত্রীরা।
যাত্রীরা জানান, সুন্দরবন এঙ্প্রেস, নীলসাগর এঙ্প্রেস, অগি্নবীণা এঙ্প্রেস ও দিনাজপুর এঙ্প্রেস কিছুটা দেরি করে ছেড়েছে। জামালপুরগামী অগি্নবীণা ট্রেনের যাত্রী আমানুর রহমান বলেন, ঈদে যাতায়াতে এমনিতেই বিড়ম্বনা থাকে। ট্রেনের শিডিউল ঠিক না থাকায় তা আরো বাড়ে। যাত্রীদের চাপ নিয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন কমলাপুর থেকে প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে যাবে। যাত্রীচাপ সামলাতে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা আছে।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কোনো অবস্থাতেই যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ঈদের পর সাতদিন ধরে এই ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের ফিরতি টিকিট নিজ নিজ স্টেশনে পাওয়া যাবে। যাত্রা নিরাপদ করতে নিয়োজিত রয়েছে র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও আনসার সদস্য। আর যাত্রীরা যাতে কোনো রকম ভোগান্তির শিকার না হন এজন্য রোভার স্কাউট, রেলওয়ে পুলিশ খুলেছে তথ্যকেন্দ্র। সেখান থেকে জেনে নিতে পারবেন বিস্তারিত সব তথ্য।
এদিকে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে এবারই প্রথমবারের মতো ঢাকা-খুলনা-ঢাকা রুটেও চলবে বিশেষ ট্রেন।
অন্যদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় ২৫ কিলোমিটার জুড়ে গতকাল ভোর থেকেই কম-বেশি যানজট ছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা থেকে করটিয়া পর্যন্ত থেমে থেমে এ যানজট লক্ষ্য করা যায়। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশেও ছিল একই অবস্থা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুনিয়াউট থেকে বিয়ালি্লশ শহর পর্যন্ত মেরামতের কাজ চলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এছাড়া দাতিয়ারা ওয়াপদা গেট এলাকায় সড়কটি যানচলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। ফলে সকাল ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যানবাহন চলে ধীরগতিতে। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।
শবে-কদরের সরকারি ছুটির দিন গতকাল বুধবার বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেলো দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ভিড়ের কারণে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকেই ব্যাপক যানজটের তৈরি হয়। টার্মিনালে ঢুকে দেখা গেলো, দক্ষিণ বঙ্গগামী মানুষ বিভিন্ন লঞ্চে উঠছে। ভিড়ে থাকা লঞ্চের পন্টুনগুলোতে মানুষের পা ফেলার জায়গা নেই। নির্দিষ্ট গন্তব্যের লঞ্চে উঠছে মানুষ। লঞ্চে যাত্রীরা টিকিটও পাচ্ছেন সহজে। বিভিন্ন লঞ্চ থেকে টিকিট এবং কেবিনের জন্য হাঁক ডাক দিচ্ছেন লঞ্চের স্টাফরা।
এমভি টিপু-১২ লঞ্চের কেবিন বয় এবং স্টাফরা পন্টুনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকছেন, সিট আছে, কেবিন লাগবে? আল আমিন নামের ঐ লঞ্চের এক স্টাফ জানালেন, লঞ্চের টাইম-টেবিল নাই। লোড হলেই লঞ্চ ছাড়ছে।
একই চিত্র দেখা যায় আরো কয়েকটি লঞ্চে। পিরোজপুরের ভা-ারিয়াগামী একটি লঞ্চে যাত্রী জাফর বলেন, ছোটখাট লঞ্চে টিকিট লাগে না। উঠলেই হয়। বিকালের দিকে কয়েকটি লঞ্চ ছাড়লেও সন্ধ্যার পর প্রায় সবগুলো একসঙ্গে ছাড়বে বলে জানা গেছে।
যাত্রীরা লঞ্চের উঠার মধ্যেই বিকাল ৫টার দিকে সদরঘাট ছাড়ে মানিক-৯ ও ফারহান-৪। লঞ্চ দুটিতে যাত্রী ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তবে ফিটনেস ছাড়া লঞ্চ চলাচল রোধ এবং অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না উঠানো হয় সেজন্য টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালাচ্ছে।
ঈদ সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে। সকালে ঘাটে সাত শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ (বিআইডবিস্নউটিসি) কর্তৃপক্ষ।
দেখা গেছে, গতকাল বুধবার বিকেল থেকেই মূলত যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাপ আরো বাড়বে। কাল শুক্রবার চাপ আরো বাড়বে। গাবতলীতে দেখা গেছে, নানা ধরনের ভোগান্তি উপেক্ষা করেই সবার অপেক্ষা তাদের কাঙ্ক্ষিত বাসের জন্য। নাড়ির টানে দূর-দূরান্তে ছুটে চলেছেন তারা। এসব যাত্রীদের অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। সময়ের হেরফের হলেও বিভিন্ন পরিবহণ কোম্পানির দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী বোঝাই করে ছাড়ছে টার্মিনাল। এদিকে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা আগের চেয়ে স্বস্তিদায়ক হবে এমন আশার কথা শুনিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এবার রাস্তা গত কয়েক বছরের চেয়ে অনেক ভালো। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবলেম নেই। রাস্তার কারণে যানজটের আশঙ্কা কম।
তবে বাসবে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী কথার সাতে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট রয়েছে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত থেমে থেমে চলছে যানবাহন। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কেও একই চিত্র। বাড়তি গাড়ির চাপ এবং অপ্রশস্ত সড়কের কারণে এই মহাসড়কে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তবে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ও যানবাহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে রয়েছেন চন্দ্রা হয়ে উত্তর বঙ্গগামী যাত্রীরা।
জানা গেছে, সকাল থেকে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচলে কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। গাড়ির দীর্ঘ সারি রয়েছে কোনাবাড়ি এলাকায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চন্দ্রায় রয়েছে প্রয়োজনীয় যানবাহনের সঙ্কট। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। যানবাহনের বাড়তি চাপ এবং সরু সড়কের কারণে এ যানজট তৈরি হচ্ছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের দাবি, বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছেন তারা।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।