ভারতীয় পোশাকে সয়লাব ঈদ বাজার
২৭ হাজার কোটি টাকার মার্কেটের ২০ হাজার কোটি টাকার পোশাক আসে ভারত থেকেই বাছাইয়ে বড় বিবেচ্য চাকচিক্য ও নকশা
মো. কামরুল হাসান
দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক। অথচ ঈদ ঘিরে রাজধানীর অভিজাত বিপণি বিতান থেকে শুরু করে ছোট, বড় শপিংমলে নারীদের পোশাকসহ প্রায় পুরো বাজারটাই ভারতীয় পোশাকের দখলে। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, পুরো বাংলাদেশের বাজার দখল করে নিয়েছে ভারতীয় পোশাক। একটি ঈদে পোশাকের বাজার প্রায় ২৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার পোশাক আসে শুধু ভারত থেকে। আর দেশি পোশাকের বাজার মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। বিক্রেতারা বলছেন, নিত্য-নতুন ডিজাইন আর কাপড়ের মান উন্নত হওয়ায় চড়া দাম হলেও এসব পোশাকের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ক্রেতাদের। যদিও দেশি উদ্যোক্তারা বলছেন, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবেই মূলত বিদেশি পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। কিন্তু গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিদেশি সিরিয়াল নির্ভর পোশাকের চাহিদা কিছুটা কম। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যে দেশের প্রধান রফতানি আয় আসে এই তৈরি পোশাক থেকে, সে দেশের উৎসবকেন্দ্রিক পোশাকের বাজার কেন আমদানিনির্ভর? ক্রেতারা বলছেন, ঈদে সবাই চায় জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক কিনতে। অন্যরকম ফেব্রিকস আর বাহারি ডিজাইন চায় সবাই। নারী ক্রেতাদের একটি বড় অংশে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা, যারা নিজেদের পোশাক সবসময়ই চায় অন্যদের থেকে কিছুটা আলাদা হোক। তাদের কাছে পোশাক বাছাইয়ে বড় বিবেচ্য হলো পোশাকের চাকচিক্য ও নকশা। ফলে তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিদেশি কাপড়ের পোশাক। আর এটারই সদ্বব্যবহার করেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের মার্কেটগুলোতে যা দেখা যায় তার ১০০ ভাগের মধ্যে ৯০ ভাগই ভারত থেকে আসা। ওদের পোশাকের গুণাগুণ কিছুটা ভালো হয় এবং নতুন মডেলের পোশাকও পাওয়া যায়। তারা জানান, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৭ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি পোশাক আমদানি হয়। এসব পোশাকের দামও হাঁকানো হয় ১৫শ থেকে শুরু করে মানভেদে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যদিও অন্যান্য বছর পোশাকের নামে ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের প্রভাব থাকলেও এবছর তেমনটি চোখে পড়েনি।
এ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের এক শো-রুমের দায়িত্বে থাকা বিক্রেতা আজাদ আবুল কালাম দৈনিক জনতাকে বলেন, আমাদের দেশ পোশাক তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দুই ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বিদেশি পোশাকের একটি আধিক্য থাকে, যেটা বহুকাল ধরেই চলে আসছে। বিশেষ করে ভারতীয় পোশাকের মতো ডিজাইন আমাদের দেশে খুব কমই তৈরি হয়। কারণ আমাদের পোশাক হাউসগুলো নিজেদের আলাদা একটি স্বকীয়তা তৈরি করে সেটি ধরে রেখেছে। আর ওরা ওদের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর মতো করে কম বয়সীদের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন পোশাক রফতানি করে। আমাদের ক্রেতারা অনেকেই ঈদের সময়ে ভারত কিংবা থাইল্যান্ড চলে যান, ওখান থেকে ঈদ শপিং করে আনেন। আমাদের দেশেও ঠিক ওদের মতো বিপণি বিতান রয়েছে, আর আমাদের কাপড়ের গুণাগুণও যথেষ্ট ভালো।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বৃহৎ শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কে ঘুরে দেখা গেছে, এই বিপণি বিতানের বড় বড় বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকানে ভারতীয় পোশাকের আধিপত্য। এই মার্কেটের মনে রেখ, নীল আঁচল, মান্যবর থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানে ভারতীয় তন্তুজ, ভাগলপুরের সিল্ক, পার্টি শাড়ি, দিলি্ল কটন, বোম্বে ডিজাইনের শাড়ি, দিল্লীর লেহেঙ্গা, সারারা লেহেঙ্গা ও ঢাকাইয়া জামদানি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ব্র্যান্ড-কিউ, প্যারিস গ্যালরি ও সানজিও বিদেশি পোশাকে ভরপুর। এসব দোকানে দেশীয় পোশাক তেমন বিক্রি হয় না বললেই চলে। ব্র্যান্ড-কিউ এর বিক্রয় কর্মী তানভীর আহমদ বলেন, আমাদের হাউজ পুরোপুরি আমাদানিনির্ভর। দেশি পোশাক খারাপ নয়। কিন্তু বিদেশি পোশাকের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ বেশি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে বহু ফ্যাশন হাউস। উদ্যোক্তারা বলছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। বড় বড় উৎসবকে সামনে রেখে এসব ফ্যাশন হাউস দেশের ডিজাইনারদের তৈরি নতুন নতুন ধরনের নকশার পোশাক নিয়ে আসে। এবারের ঈদকে সামনে রেখেও নিত্য-নতুন পোশাক আনা হয়েছে। যদিও বাংলা বর্ষবরণ কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি দিবসকে সামনে রেখে দেশীয় কাপড় বা পোশাকের বাজারটি বেশ জমে ওঠে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট থাকে মূলত ঈদ-উল ফিতরকে ঘিরে। সেখানে ভারতীয় কাপড়ের এই আগ্রাসন এবং ক্রেতাদের আগ্রহ দেশের বুটিক শিল্পকে ফেলছে হুমকির মুখে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।