কিশোরগঞ্জে সড়কে ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের ভয়ে আতঙ্কে যাত্রীসাধারণ
৩৮৪ কোটি টাকার কাজে ধীরগতি
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে সুবল চন্দ্র দাস
এবারের ঈদযাত্রায় বিস্তীর্ণ হাওগের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কয়েকটি উপজেলার প্রতিদিনের ২০ হাজার যাত্রীসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষের চরম ভোগান্তি হতে পারে। কারণ এসব এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে যাতায়াতের অপ্রশস্ত প্রধান সড়ক দুটো খানাখন্দে ভরে গেছে। যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এ দুটো সড়কে সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ৭-৮ ঘণ্টা। সড়কগুলো সংস্কারের জন্য মোট ৩৫৪ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হলেও সংস্কার কাজ ঠিক সময়ে শুরু হয়নি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানাচ্ছে, কিশোরগঞ্জ- টোক-কাপাসিয়া-ঢাকা সড়ক কিশোরগঞ্জ থেকে কম দূরত্বে এবং কম সময়ে ঢাকায় যাওয়ার প্রধানতম আঞ্চলিক সড়ক।
হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, তাড়াইল, নিকলী, নান্দাইল, আঠারবাড়ী ও কেন্দুয়া থেকে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী বিভিন্ন পরিবহণে ঢাকা-কিশোরগঞ্জের মধ্যে যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে ঢাকার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা এ সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে অভ্যস্ত। কিন্তু এ সড়কে বিশেষ করে গাজীপুরের টোক থেকে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস পর্যন্ত প্রায় ৮৫ কিলোমিটার সড়ক খুব অপ্রশস্ত। এ সড়কের ১১০ কিলোমিটার পথের অন্তত ৫০টি স্থানে বাস থামিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা বাস-ট্রাককে সাইড দিতে হয়। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টার বদলে ৬-৭ ঘণ্টা। এসব নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই চালক ও বাসযাত্রীদের মধ্যে তর্কাতর্কি, হাতাহাতিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। ঈদের আগে এ সড়ক প্রশস্ত করার কাজে হাত দেয়ায় সড়কের কোনো কোনো স্থান আরও অপ্রশস্ত হয়ে পড়েছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে দুই কিলোমিটার পর পর সাইড দিতে গিয়েও প্রচুর সময়ের অপচয় ঘটছে। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব-ঢাকা সড়কে যান চলাচল খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ সড়কে চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছার কথা থাকলেও বাসগুলো ঢাকার গোলাপবাগে পৌঁছছে ৭-৮ ঘণ্টায়। এ সড়ক ব্যবহার করেই কিশোরগঞ্জসহ নান্দাইল, তাড়াইল, আটারবাড়ী, ঈশ্বরগঞ্জ, কেন্দুয়াসহ হাওড়ের মানুষ সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। কিন্তু ভৈরব পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ থাকায় হাজার হাজার ঈদযাত্রী যে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়বেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই স্থানীয়দের।
অনন্যা সুপার পরিবহণের চেয়ারম্যান শাহজাহান লসকর জানান, ভৈরব সড়ক সংস্কারের কাজ ধীরে চলছে। তাছাড়া এ সড়কে ঢাকা যেতে প্রতিদিন গাউছিয়ায় দেড় ঘণ্টার মতো যানজটে আটকে থাকতে হয়। ফলে একটির বেশি ট্রিপ দিতে না পারায় বাসের মালিকপক্ষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম জানান, ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব-কিশোরগঞ্জ সড়ক ঈদযাত্রায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই জরুরি ভিত্তিতে ১৮ ফুটের সড়কটিকে ৩০ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৬০ কোটি বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। সামনের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ হলে এ সড়কে কোনো সমস্যা থাকবে না। গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা প্রতিনিধিকে জানান, রাজেন্দ্রপুর থেকে টোক পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত ও মেরামত করার প্রকল্পের মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে এবং এতে মোট ২২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। এবারের ঈদযাত্রায় কিছু সমস্যা হলেও এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।