
ঐতিহাসিক যশোর রোডের ৫টি শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ উপড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বে। এ ছাড়া কিছুকিছু গাছের ডালপালাও ভেঙে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোডের দুই সহস্রাধিক রেইনট্রি গাছ মহাদুর্যোগ রক্ষায় ঢাল হয়ে বেশ ভূমিকা রেখেছে। মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে এক রাতেই প্রাণ দিলো ৫টি বৃক্ষ। এমনই অভিমত তাদের। যশোর জেলা পরিষদের হিসাবে, বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বে যশোর রোডের যশোর-বেনাপোল ৩৮ কিলোমিটার অংশের ৫টি শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তায়। এর মধ্যে ঝিকরগাছার হাজের আলী বালিখোলা এলাকায় ১টি, বেনেয়ালিতে ২টি, বাদে নাভারণে আরও ২টি গাছ রয়েছে। ডালপালাও ভেঙেছে অনেক গাছের। ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের চেষ্টায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে সড়ক থেকে গাছের কিছু অংশ সরিয়ে চলাচলের আংশিক উপযোগী করা হয়েছে। যশোর আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে। পরে এর কেন্দ্র ভারতের ভেতরেই যশোরের পশ্চিমাংশ ছুঁয়ে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, মহেশপুর হয়ে উত্তরাঞ্চলে চলে যায়। বুধবার রাতে আম্পানের তা-বে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০৪ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে এ তা-ব।
যশোর জেলা পরিষদের বৃক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরত এমএ মঞ্জু জানান, যশোর রোডের যশোর-বেনাপোল ৩৮ কিলোমিটার অংশে ৫টি শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ উপড়ে পড়েছে রাস্তায় ও রাস্তার পাশে। যশোর রোড পুনঃনির্মাণ করতে গিয়ে অনেক গাছের শিকড় কাটা পড়ে দুর্বল হয়ে গেছে। এজন্য উপড়ে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই দাবির সঙ্গে একমত যশোরের পরিবেশবাদিরা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনকর্মী গ্রিনওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহামুদ সবুজ বলেন, গাছগুলো ধ্বংস করে দিতে রাস্তা নির্মাণের সময় পরিকল্পিতভাবেই শেকড় কেড়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে আম্পান যশোর অতিক্রমের সময় যশোর রোডের ওই দুই সহস্রাধিক বড় বড় রেইনট্রি গাছ মানুষকে রক্ষায় ঢাল হিসেবে কাজ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। যশোর সরকারি এমএম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছোলজার রহমান বলেন, অনেকে শুনলে হয়ত বিশ্বাস করতে চাইবেন না এ রোডের বৃক্ষগুলো মানুষকে কতটা রক্ষা করেছে। মনে হতে পারে এত ফাঁকা ফাঁকা গাছ আবার মহাদুর্যোগ রক্ষায় ঢাল হলো কিভাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই গাছগুলো ঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষকে বাঁচিয়েছে। আমরা পরিবেশবিদরা এটা জানতাম বলেই গাছগুলো রক্ষায় বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছি। যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান কলামিস্ট অধ্যাপক আমিরুল আলম খান বলেন, যশোর রোডের গাছ আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য। সর্বোপরি এই বিপুল বিশাল মহীরুহবীথি আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাপ্রাচীর। সুন্দরবনের পরেই যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চলকে এই বৃক্ষপ্রাচীর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাত থেকেও আমরা অনেকটা রক্ষা পেয়েছি। তাই এ বৃক্ষপ্রাচীর রক্ষা আমাদের রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক দায়িত্ব।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।