চোখ বেঁধে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নেয়ার ঘটনার পর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে গতকাল সোমবার দুপুরে 'তুলে নিয়ে গিয়েছিল' পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তবে এক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ঐ ৩ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
ডিবি কার্যালয় থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে তারা তাদের ও পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা স্বীকার করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ডিবি কার্যালয় থেকে ফিরে আসা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, রাশেদ খান ও ফারুক ৩ জনই বক্তব্য রাখেন। এ সময় সরকারের কাছে নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানান তারা। সাংবাদিক সম্মেলনে রাশেদ খান বলেন, আমার বাবার কোনো দোষ নেই।
তাকে ছেড়ে দেয়া হোক। কষ্ট করে লেখাপড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। তাকে আটক করাটা যথেষ্ট কষ্টকর। এখন আমার বাবার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চলছে।
নুরুল হক নূর বলেন, গুলিস্তানে নেয়ার পর গামছা কিনে চোখ বাঁধা হয়। মাথায় হেলমেট পরানো হয় আমাদের। এর পর ডিবি অফিসে নেয়া হয়।
ডিবি পুলিশ বলেছে, তোমাদের ওপর হামলার আশঙ্কা ছিল। সেজন্য নিয়ে আসা হয়েছে। একটা ভিডিও দেখানোর কথা বলেন তারা যদিও কোনো ভিডিও দেখানো হয়নি। ছেড়ে দেয়ার সময় বলা হয় ডাকলে আবার যেতে হবে ডিবি অফিসে। নূর দাবি করে বলেন, এটি একটি অপহরণ। মিডিয়া না জানলে হয়তো ফিরে আসতাম কি-না সন্দেহ। সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অপর নেতা ফারুক হাসান বলেন, আমাদের ওপর হামলা হবে বলে নিয়ে আসা হয়। ডিবি কার্যালয়ে পানি খেতে চাইলে দেয়া হয়নি। নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও নিরাপত্তা দাবি করছি।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা ইস্যু থাকতেই পারে। সরকার ডাকলেই কিন্তু যেতাম। বলে কয়ে নিয়ে গেলে তো আমরা পালাতাম না। অবশ্যই যেতাম। এভাবে না নিয়ে গেলেই পারতো।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের নিরাপত্তার দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন শেষে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত পদক্ষিণ করে। মিছিলে তারা সেস্নাগান দেয় 'গুম করে আন্দোলন থামানো যাবে না।'
এর আগে রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকা থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এই ৩ নেতাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয় সাদা পোশাকের পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে কাছে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের কথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, তাদের আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। কিছু তথ্য জানতে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। তারা চলে গেছে।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দায়ের করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের চার মামলা দুদিনের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এর মধ্যেই এ দাবি পূরণ না হলে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।