সৌদি আরবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ
'আমার মজিদের লাশটা এনে দাও'
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
সৌদি আরবের রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার বিরাব এলাকার আব্দুল মজিদের পিতা আওলাদ হোসেনের আকুতি, বাবা তোমরা আমার মজিদের লাশটা এনে দাও। মা জেবুন্নেছা বারবার একই কথা বলে আহজারি করছেন। সোমবার দুপুরে নিহত মজিদের বাড়িতে গিয়ে
দেখা যায় বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজনের এমন আহাজারি। পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে বিরাব এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মজিদের লাশের অপেক্ষা তার বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করেছে। পরিবারের সদস্যরা এখন প্রহর গুনছেন কখন মজিদের লাশ আসবে? এখন ছেলের লাশ ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বাবা আওলাদ হোসেনসহ পরিবারের লোকজন।
বাবা আওলাদ হোসেন অভিযোগ করে জানান, কর্মজীবনের তাগিতে রাজধানীর গুলশান এলাকার কুকিল ট্রাভেলসের মাধ্যমে এ বছরের জানুয়ারিী মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে যায় ছেলে আব্দুল মজিদ। ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রায় ৩ মাস আগে গেলেও কাজ পায় মাত্র ১২ দিন আগে। দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই ছেলের লাশটি আনার জন্য কুকিল ট্রাবেলসের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে আসছেন। ট্রাবেলসের কর্তৃপক্ষ কোন সময় দিচ্ছে না, কবে লাশটি দেশে আসবে তাও জানে না তারা। অসহায় পরিবারটি এখন ট্রাবেলস এজেন্সির দিকে তাকিয়ে আছে, লাশের অপেক্ষায়।
কুকিল ট্রাবেলসের কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, তারা কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হচ্ছে। লাশ শীগ্রই আনা হবে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভার বিরাব লালটেক গ্রামের আওলাদ হোসেনের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেজো ছেলে আব্দুল মজিদ খান। সাত বছর আগে পার্শ্ববর্তী শিমুলিয়া এলাকার গোলজার ভূঁইয়ার মেয়ে ময়না বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে আমেনা আক্তার নামে ৬ বছরের একটি মেয়ে আছে। নিজের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। একটি ছোট টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে বসবাস করতেন আব্দুল মজিদ। বিয়ের পর সংসার চালাতে স্থানীয় ইটভাটায় কাজ করতেন মজিদ। পরিবার ও নিজেকে স্বচ্ছল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আত্মীয় স্বজন, এনজিও ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সুদের উপর ছয় লাখ টাকা ঋণ করে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পার্শ্ববর্তী পলাশ থানাধীন ডাঙ্গা কেন্দুয়াবো এলাকার তুহিনের মাধ্যমে পাড়ি জমান সৌদি আরবের রিয়াদে। সেখানে প্রায় ৩ তিন মাস কোন কাজ পাননি আব্দুল মজিদ। রিয়াদের আল নুরা ইউনির্ভাসিটি আবাসিক এলাকায় একটি ভবনের একটি রুমে ৭/৮ জনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। কিন্তু দেশ থেকে টাকা পাঠালে পেটে খাবার জুটতো তার। একপর্যায়ে ১২ দিন আগে সেখানকার ইউনিভার্সিটিতে ক্লিনারের কাজ পান তিনি। প্রতিদিনের মতো রাতের কাজ শেষ করে শুক্রবার সকালে অন্যদের সঙ্গে রুমে ঘুমিয়ে পড়েন আব্দুল মজিদ। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আব্দুল মজিদ খানসহ রুমের সবাই। দুপুরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একই ভবনে থাকা রাশেদ খান নামে এক যুবক আব্দুল মজিদের বড় ভাই বাছেদ আলীকে আব্দুল মজিদের মৃত্যুর খবর জানান
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।