বদরগঞ্জে জাতির পিতা ও জাতীয় পতাকা নিয়ে ইমামের কটূক্তি
প্রতিবাদ করায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মারধর
বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের বদরগঞ্জে জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তির পাশাপাশি স্বদেশ প্রেমকে হারাম উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন এক ইমাম। তার ঐ বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় হাসান শাহরিয়ার সুমন (৩৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়েছে ইমামের অনুসারীরা। বর্তমানে তিনি উপজেলা হাসপাতালে গুরুতর আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর এলাকার কাজীপাড়া জামে মসজিদে জুম্মার খুতবার আগে ইমাম মফিজুল ইসলাম ঐ বক্তব্য দেন। এ ঘটনায় সুমনের স্ত্রী গোলেজা সুলতানা বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
গতকাল সোমবার এলাকাবাসী ও অভিযোগ
সুত্রে জানা যায়, ঐদিন জুম্মার খুতবার আগে ইমাম মফিজুল ইসলাম উপস্থিত মুসলি্লদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'মানুষের তিন পিতা-আদি পিতা-আদম(আঃ), জাতির পিতা- ইবরাহিম(আঃ) এবং নিজের-পিতা। এই তিন পিতার বাইরে কোন পিতা থাকতে পারে না। যারা শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলে তারা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। যারা জাতীয় পতাকাকে সম্মান দেখাবে পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আর যেসব মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি করছে তারা গোনাহগার। যাদের মধ্যে স্বদেশ প্রেম রয়েছে তারাও গোনাহগার।' এভাবে ইমামের বক্তব্য চলতে থাকলে তীব্র প্রতিবাদ করেন জুম্মার নামাজ পড়তে আসা মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাইফুল ইসলামের ছেলে হাসান শাহরিয়ার সুমন। এ কারণে ইমামের নির্দেশে তাকে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেন অনুসারীরা। তিনি আরেকটি মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তবে পথিমধ্যে তার সাথে ইমাম মফিজুল ইসলামের দেখা হয়। তিনি ইমামের কাছে মসজিদে দেয়া বক্তব্যসহ তাকে তাড়িয়ে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ইমাম ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ইমাম অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে মসজিদ চত্বরে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। সালিশে ইমামের সাথে বেয়াদবি করার অপরাধে ঐ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে বেধড়ক পিটুনি দেয় ইমাম অনুসারীরা। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার লোকজন গুরুতর আহতাবস্থায় সুমনকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে নির্যাতনের শিকার সুমনের মা আঞ্জুয়ারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইমাম অনুসারীরা প্রতিনিয়ত বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ফলে বেশিরভাগ সময়ই আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডাার আইয়ুব আলী সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে পেটানোর পর এখন তাদের ভিটেছাড়া করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অথচ পুলিশ কোন ব্যবস্থাই নিতে পারছে না- যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।