১২ কোটি টাকা ব্যয়ে
রৌমারীতে কাজে আসছে না রাবার ড্যাম
সেচ সঙ্কটে কৃষক
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে সাখাওয়াত হোসেন সাখা
ভরা ইরি-বোরো মৌসুমেও কৃষকের কাজে আসছে না কুড়িগ্রামের রৌমারীর খেয়ারচর জিঞ্জিরাম নদীতে রাবার ড্যাম। উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে একবাড়ও প্রায় ১৮শ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হয়নি। রাবার ড্যামের পানিপ্রবাহের নালা নেই, ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, রাবার ড্যামের আশপাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারদের খামখেয়ালিপনার কারণেই কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছে না। এ কারণে ঐ এলাকায় বোরো চাষাবাদ কমে এসেছে। চলতি মৌসুমে মাত্র শ'খানেক হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের খেয়ারচর জিঞ্জিরাম নদীতে এই রাবার ড্যাম। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সমিতির নেতারা কোনো দিনও রাবার ফোলাইনি। তাই পানি না পেয়ে কৃষকরা বিকল্প দোল- সেচনি ও মেশিন দিয়ে খেতে সেচ দিচ্ছে।
অন্যদিকে রাবার ড্যামের পানির সব ধরনের সুবিধা থাকলেও কেন পাচ্ছে না কৃষক, তা এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। রাবারড্যাম দেখতে হাজারো লোকজন ছুটে চলে ঐ প্রান্তে। দেখতে যায়, স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও। কিন্তু সেখানে আবাদি জমিতে কোনো ধরনের সেচের সুবিধা দিচ্ছে না। এতে ঐ অঞ্চলের সাধারণ কৃষক সেচের সুবিধা পাচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে কৃষি সেচ প্রকল্প আওতায় জিঞ্জিরাম নদীতে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যামটি নির্মিত হয়। একই সঙ্গে ঐ নদীসংলগ্ন এলাকায় সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য কোনো ধরনের পানিপ্রবাহের নালা তৈরি করা হয়নি। যা উক্ত পানিপ্রবাহের প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নালা তৈরি করার বরাদ্দও ছিল। আজও স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পায়নি এলাকার মানুষ। ইরি-বোরো চাষসহ রবিশস্য চাষে নতুন দিগন্তের সূচনা হয় ঐ অঞ্চলে। ড্যামটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। বর্তমান এ সমিতির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩শ জন। প্রথম বছরে থেকে পুরোদমে রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও তা আজও আলোর মুখ দেখা যায়নি। এখনও সুবিধা থেকে বঞ্চিত কৃষকরা। এ বিষয় জানতে চাইলে রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, রাবার ড্যাম্প যেন আমাদের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এক বিন্দু উপকারে আসেনি কৃষকের। রাবার বসিয়ে ও আংশিক পার নির্মাণ করেই যেন ঠিকাদারের লোকজন দায়মুক্ত। এ প্রসঙ্গে রৌমারী এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুর কায়ুম জানান সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ড্যাম্পটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কাজটি সম্পূর্ণ দেখানো হয়েছে। বাঁধের পার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা কোনো কিছুই সেচ ও কৃষি বান্ধব করা হয়নি। নামেমাত্র রাবার বসিয়ে একটি পার অসম্পূর্ণ অপর পারটি দুর্বল কাজ করে। সটকে পড়ে ঠিকাদারও। রাবার ড্যাম্পটির বিষয়ে মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় এক সাংবাদিকের প্রশ্নে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপঙ্কর রায়ের মাধ্যমে এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল কায়ুমের নিকট জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি। যার ফলে সরকারের কৃষিবান্ধব পরিকল্পনা সফল হচ্ছে না।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।