প্রকাশকদের দাবির পরও বাড়ছে না বইমেলার সময়সীমা। বইমেলায় হঠাৎ অগি্নকা-ের কারণে মেলার সময় বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান খান। গত রোববার রাতে আগি্নকা-ের প্রতিবাদে ৫ মিনিট নীরবতা পালন করেছে বইমেলায় আগত লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশকরা সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলা একাডেমীর কাছে সময় বাড়ানোর দাবি করেন। প্রকাশকরা ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতার ও শাহবাগের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে মেলা জমে উঠেনি দাবি করে দু'দিন বইমেলার সময় বাড়ানোর দাবি করেন। কিন্তু গত রোববার রাতে বইমেলায় গভীর রাতে হঠাৎ করে আগুন লাগে। এই আগুনে প্রায় ২৫টি প্রকাশনা স্টল পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। অগি্নকা-ের ঘটনার প্রেক্ষিতে বইমেলার সময় বৃদ্ধি করা হবে না বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, বাকি দিনগুলোতে সকাল ১১টা থেকে মেলা শুরু হবে। ক্ষতিগ্রস্ত স্টলগুলো নিয়েই মেলা চলবে। বইমেলার স্টলে অগি্নকা-ের ঘটনার প্রতিবাদে ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি এবং নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ৫ মিনিট নীরবতা পালন করে অমর একুশে বইমেলা-২০১৩। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা ৩৫ মিনিট ৫ পর্যন্ত এ নীরব প্রতিবাদ জানায়। ঘড়ির কাটায় ৫টা ৩০ মিনিট বাজার সাথে সাথেই বইমেলায় আগত দর্শক, লেখক ও প্রকাশকরা যে যেখানে ছিল, সেখানেই দাঁড়িয়ে যান। বন্ধ থাকে বিক্রি। প্রায় অর্ধশত প্রকাশক বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেন। এ সময় ক্রেতারাও যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
গতকালের মেলামঞ্চ : গতকাল মূলমঞ্চে প্রদান করা হয় বাংলা একাডেমী প্রবাসী লেখক পুরস্কার ২০১২। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। কথাশিল্পী সালেহা চৌধুরী এবং ডা. মাসুদ আহমেদকে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী প্রবাসী লেখক পুরস্কার ২০১২ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদ্বয়ের হাতে পুষ্পস্তবক, পুরস্কারের চেক, ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন একাডেমীর সভাপতি ও মহাপরিচালক।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমীর কার্যক্রমকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নানা কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে প্রবাসী লেখক পুরস্কার যার মধ্যদিয়ে প্রবাসে বাংলা সাহিত্যচর্চা আরো বিস্তৃত হবে। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক সালেহা চৌধুরী এবং ডা. মাসুদ আহমেদ বলেন, বাংলা একাডেমী প্রবাসী লেখক পুরস্কার প্রদান করে আমাদের সাহিত্যকর্মে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। এই পুরস্কার শুধু ব্যক্তি আমাদের নয় বরং প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার ধারাকে আরো বেগবান করবে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, প্রবাসী লেখকগণ বাংলা সাহিত্যে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করে চলেছেন। বাংলা একাডেমী প্রবর্তিত প্রবাসী লেখক পুরস্কার তাদের এই সৃজনকর্মকে প্রণোদনা যোগাবে। মেলামঞ্চে 'চারুশিল্পের অগ্রপথিক ও কীর্তিমান শিল্পপুরুষ রশিদ চৌধুরী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি ও শিল্পসমালোচক রবিউল হুসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, স্থপতি সামসুল ওয়ারেস এবং চিত্রসমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের শিল্পকলা আন্দোলনে রশিদ চৌধুরী এক বিশিষ্ট নাম। ট্যাপেস্ট্রি শিল্পের মাধমে আমাদের শিল্পভূবনে তিনি যোগ করেছেন ভিন্নতর মাত্রা। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে শিল্পভ্রমণ তার শিল্পবোধকে বিস্তৃতি দিয়েছে কিন্তু শিল্পকর্মে সততই তিনি বাঙময় করেছেন আপন স্বদেশের মুখ।
আলোচকবৃন্দ বলেন, রশিদ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গজ আধুনিকতার সাধক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক যে শিল্পকলা আন্দোলন তৈরি করেছিলেন তা মূলত আমাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক বলয়কে ঋদ্ধ করেছে। তারা বলেন, বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ_ লোকচেতনা রশিদ চৌধুরীর শিল্পকর্মে প্রাণ পেয়েছে। সভাপতির ভাষণে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, রশিদ চৌধুরী তার শিল্পকর্ম উপস্থাপন করেছেন মূলত গভীর শিল্পচেতনা, গহনতাসঞ্চারী মনন এবং প্রগাঢ় দেশপ্রেমের প্রতীকে। ৮০তম জন্মবার্ষিকীতে রশিদ চৌধুরীকে স্মরণ করে বাংলা একাডেমী আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে।
সন্ধ্যায় রিফাত নিগার শাপলার পরিচালনায় 'শাপলাকলির আসর' সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী মালবিকা দাশ, শিমু দে, আবদুল আলিম, মাহবুবা রহমান, ইফফাত আরা নার্গিস, মঙ্গল চন্দ্র ম-ল, দীপা চৌধুরী এবং মো. মুরাদ হোসেন বাদল।
নতুন বই : গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৭টি। মেলায় এ পর্যন্ত ২৭৪৯টি নতুন বই এসেছে। গতকাল বইমেলায় গল্প-১৪টি, উপন্যাস-১৩টি, প্রবন্ধ-৬টি, কবিতা-১৮টি, গবেষণা-৩টি, ছড়া-৫টি, শিশুতোষ-১টি, জীবনী-১টি, রচনাবলী-০টি, মুক্তিযুদ্ধ-২টি, নাটক-১টি, বিজ্ঞান-০টি, ভ্রমণ-০টি, ইতিহাস-১, রাজনীতি-০টি, চি:/স্বাস্থ্য-০, কম্পিউটার-০টি, রম্য/ধাঁধা-১টি, ধর্মীয়-০টি, অনুবাদ-২টি, অভিধান-০টি, সায়েন্স ফিকশন-০টি এবং অন্যান্য-৮টি। মেলায় ১৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
আজকের অনুষ্ঠান : আজ বিকেল ৪-০০টায় 'বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফিরোজ মাহমুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন- সাইফুদ্দীন চৌধুরী, প্রকাশ চন্দ্র দাস এবং হাশেম সূফী। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।