জামালপুরে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিংয়ে সেচ সঙ্কটে দিশাহারা কৃষক
ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
জামালপুরে কয়েক দিন ধরে পল্লী বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং চলছে। এ কারণে সেচ বর্িিঘ্নত হচ্ছে। পানির অভাবে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরোর কয়েক লাখ হেক্টর খেত শুকিয়ে যাচ্ছে। শিগগির সেচ দিতে না পারলে ধানের চারা শুকিয়ে মরে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজকর্ম ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, জামালপুরের সাতটি উপজেলায় সেচ সংকটে পড়েছেন অন্তত ছয় লাখ কৃষক। দু-তিন ঘণ্টা পরপর বিদ্যুতের ঝিলিক মিললেও ২৫-৩০ মিনিট পর আবার অন্ধকার হয়। গ্রাহকরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ চারঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। এ কারণে খেতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না।
শিগগির খেতে পানি দিতে না পারলে ধানের চারা মরে যাবে। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে চলতি ইরি খেতে সেচ দিতে না পারায় শত শত বিঘা ফসলী জমি পানির অভাবে ফেঁটে চৌচির হচ্ছে। অরপদিকে বিদ্যুতের অতিমাত্রার লোডশেডিংয়ে শিল্পকারখানাসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অচল হয়ে পড়েছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করায় টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় দিনে ২১ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। বিদ্যুতের এ দুভর্োগ চিত্র বিশেষ করে গত তিন সপ্তাহ ধরে চলছে। ফলে প্রতিদিন ২৪ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৩ঘণ্টাও বিদ্যুৎ মিলছে না গ্রাহকদের ভাগ্যে। এ পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে তা-ও বলতে পারছে না খোদ স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। জামালপুরের কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জামালপুর সদর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বোরো আবাদ ১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৩ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৬ জন কৃষক বোরোর আবাদ করছেন।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুতের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৮ মেগাওয়াট।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বকশীগঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, বকশীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর উপজেলার কিছু অংশে এখান থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়। বকশীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫১৪টি বাণিজ্যিক, বিদ্যুচালিত সেচপাম্প ১ হাজার ৩৫টি, ভারী শিল্প ১০টি, শিল্পকারখানা ৩২৫টি ও বাকিগুলো সাধারণ গ্রাহক। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ মেগাওয়াট। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র তিন মেগাওয়াট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের নয়া মালমারা, নাপিতের চর, আগুনের চর, বলিদাপাড়া মরাকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের অভাবে ইরি খেত ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে। কয়েকটি গ্রামের গ্রাহকেরা জানায়, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মুঠোফোন চার্জসহ ইলেকট্রনিক সামগ্রী চালানো যাচ্ছে না। ছোট-বড় কলকারখানা চালানো যাচ্ছে না। বাসাবাড়িতে পানিও নেই। বোরো-ইরি ধানের খেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। বকশীগঞ্জের কোহিনূর এমদাদ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক জানান, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কারখানার মেশিন প্রায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কয়েক শ কর্মচারীকে বেতন দিয়ে উৎপাদন করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
বকশীগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মো. মানিক সওদাগর জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা পরপর ১৫-২০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ আসে। ওই বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না। এতে মেশিন বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর লাখ লাখ টাকা লোকসানের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের বকশীগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ আবদুল জলিল জানান, 'বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেকায়দায় আছি। বিদ্যুৎ না পেয়ে প্রায়ই গ্রাহকেরা ফোন ও কার্যালয়ে এসে গালিগালাজ পর্যন্ত করছেন। দুই সপ্তাহ ধরে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না। কত দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে আমি জানি না।' জামালপুর পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক পানা উল্লাহ জানান, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের একটি ইউনিট মেরামত করা হচ্ছে ও অন্য দুটিতে গ্যাসের চাপ না থাকায় পুরো উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এমন লোডশেডিং হচ্ছে। কত দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে, তা তিনি জানেন না।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।