অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হতে আর মাত্র ১১ দিন বাকি। শেষ দিকে মেলায় পাঠক-দর্শণার্থীর ভিড় বাড়বে এমনটা অনুমতিই ছিল। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল শুক্রবার মেলায় মানুষের ভিড় সেই অনুমান ছাড়িয়ে যায়। মানুষের ঢল নামে মেলায়। পাঠক-দর্শণার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে এদিন মেলায় ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে কেনাকাটাতেই ব্যস্ত ছিলেন পাঠক-দর্শণার্থীরা। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না স্টলগুলোতে। এমনকি ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বিক্রেতারাও।
ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মানুষের ভিড় দেখা যায় মেলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং শেষ বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায় মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এদিন মেলায় পাঠক-দর্শণার্থীদের কেনাকাটার প্রতি বেশি ঝোঁক থাকায় আগতদের অধিকাংশের হাতেই দেখা গেছে বইয়ের প্যাকেট। অনেকের হাতে একাধিক প্যাকেটও দেখা গেছে।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে মাসুদ তার ভাতিজা রিফাতকে নিয়ে মেলায় এসেছে। মাসুদ দৈনিক জনতাকে বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় আজ মেলায় এসেছি। তবে এতটা ভিড় হবে চিন্তাও করতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে কয়েকটি বই কিনেছি। আরো কয়েকটি বই কেনার ইচ্ছা আছে। অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে বই কিনতে পারছি না। যেদিকে একটু ফাঁকা পাচ্ছি, সেদিক থেকেই বই কিনছি। এসময় রিফাত বলেন, মেলায় এসে ভালোই লাগছে। তবে একটু বেশি ভিড়। হাঁটাহাঁটি করতে পারছি না। তারপরও ২টা বই কিনেছি। ভূতের বই, আরেকটা গল্পের বই।
অন্বেষা প্রকাশনীর বই বিক্রেতা মো. আশিকুর রহমান দৈনিক জনতাকে বলেন, এবছর আজই এতো বেশি লোক সমাগম। বিক্রিও হচ্ছে আজ অনেক। এবছরের মধ্যে আজই আমাদের বেশি বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতেও ভালো বিক্রি হবে।
মেলার ১৭তম দিনে ৫০টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মেচন করা হয়। এছাড়া এদিন নতুন এসেছে ১৬৫টি। এ পর্যন্ত এবার মেলায় মোট নতুন বই এসছে প্রায় ২ হাজার ৩শ। এেিদকে, প্রতি বছরের মতো এবারও সাপ্তাহিক এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে শুধুমাত্র শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় শিশু প্রহরের। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন। অভিভাবকরা ছোট বেলা থেকেই শিশুদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সন্তানদের নিয়ে এসেছেন বই মেলায়। তাই সকাল থেকেই শিশু-কিশোরদের পদচারণায় মুখরিত ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি আর ইকরি-মিকরিকে নিয়ে মাতামাতি ছিল শিশু প্রহরে। তারা নানা রকম অঙ্গ ভঙ্গি, নাচ-গান আর মজা করে আনন্দে মুখর করে তোলে শিশুদের। মেলায় শিশুদের বই কেনার ঝোঁকও ছিল চোখে পড়ার মতো। ছুটির দিনগুলোতে বই মেলায় শিশুদের জন্য আলাদা এই আয়োজনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অভিভাবকরা।
বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরা মেলায় এসেছে। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করছে তাদের প্রিয় বই। মেলায় রয়েছে শিশু চত্বর। সেখানে গিয়ে কেউ কেউ খেলায় মেতেছে। উত্তরা থেকে মায়ের সঙ্গে মেলায় এসেছে আনিতা। সিসিমপুর স্টলের সামনে কথা হয় ক্লাস নাইনের শিক্ষার্থী আনিতার সঙ্গে। আনিতা জানায়, মেলায় ঘুরে বেড়াতেই তার বেশি ভালো লাগে। বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বই দেখেছে। কিছু বইও কিনেছে। তার পছন্দের লেখকের মধ্যে রয়েছে জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ ও আনিসুল হক। বাবার সঙ্গে গতকাল বইমেলায় আসে শিশু নাট্যশিল্পী মেঘদূত। মেঘদূত জানায়, বইমেলায় আসতে তার ভালো লাগে। কিন্তু গতকাল নাটকের শো থাকায় তার আগে কয়েক দিন মহড়া করতে হয়েছে। এছাড়া বাবার অফিসের ব্যস্ততা সব মিলিয়ে আজ ছুটি থাকায় চলে এসেছে।
মেঘদূতের বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, এবার নানা ব্যস্ততায় মেলায় আসা হয় নি। তাই মেয়ের আগ্রহটা অনেক বেশি ছিল। মেলায় এসেই সে তার প্রিয় কিছু বই সংগ্রহ করেছে। মেলার পরিবেশও বেশ ভালো। তবে আজ লেঅক সমাগম অনেক বেশি।
এদিকে, বইমেলায় এসেছে ছাত্রলীগ সভাপতির বই 'ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস'। বইটি পাওয়া যাচ্ছে শব্দশৈলী প্রকাশনীর স্টলে। স্টল নম্বর- ৩৫৭, ৩৫৮ এবং ৩৫৯। বই প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস যারা পড়বেন, তারা জানতে পারবেন সংগঠনটি কিভাবে জন্মের পর থেকে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হয়েছে। আমার বিশ্বাস, বইটি পড়ে সবার ভালো লাগবে। আর পাঠকের ভালো লাগাই হবে আমার চলার পথে অনুপ্রেরণা।
উল্লেখ্য, শব্দশৈলী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিক বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। বইটির মূল্য ৩৫০ টাকা। বইমেলায় শব্দশৈলীর স্টল ছাড়াও ছাত্রলীগের নিজেস্ব স্টল মাতৃ ভূমিতেও বইটি পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে, এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক-সাহিত্যিক হামিদ মোহাম্মদ জসিম এর 'অমর কিশোর শেখ রাসেল' ও 'ভূতের রাজ্যে একরাত' নামের দুটি বই। বই দুটি পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলার শিশু কর্ণারের ৫৬২ নং শিশু কিশোর প্রকাশনের স্টলে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।