উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে উঠান বৈঠকে ব্যস্ত নৌকার প্রত্যাশীরা
সফিকুল ইসলাম
সরকারের ৯ বছরের উন্নয়ন চিত্র গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগোচ্ছে সরকারি আওয়ামী লীগ। শুধু সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশব্যাপী গ্রাম-গঞ্জে, ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে একত্রিত করে উঠান বৈঠক করার নির্দেশনা দেয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলীয় নির্দেশনার পর উঠান বৈঠক ছাড়া আর কোনোই বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলটি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ সংসদীয় আসনে উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে উঠান বৈঠক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে নৌকার পক্ষে নির্বাচনের প্রচারণা যেমন হবে, তেমনি সরকারের উন্নয়ন
চিত্রও সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে। সভা-সমাবেশের চেয়ে এই কার্যক্রম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগেই উঠান বৈঠক কার্যক্রম শুরু ও শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী এরইমধ্যে সারাদেশে চিঠি পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে গত বছরের ৩ জুলাই এ চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় কমিটি। এই উঠান বৈঠকে স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধি, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে উঠান বৈঠকের চিঠি ইতিমধ্যে তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে। ঐ সময় থেকেই তৃণমূলে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
দলটির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, তৃণমূল নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানো, ঐ চিঠিতে বিভিন্ন এলাকায় মতবিরোধের কারণে দলের যেসব ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মী রাগ-ক্ষোভ নিয়ে ঘরে উঠে গেছেন, বর্তমান জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের সানি্নধ্যে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া জেলায় এমন নিষ্ক্রিয় নেতার সংখ্যা কত জন তার তালিকা প্রদান করতেও বলা হয়। এই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে দলের কার্যালয় নেই সেসব স্থানের তালিকা তৈরি করে দ্রুত সভাপতির কার্যালয়ে পাঠাতে। আর কোথায়-কোথায় ভাড়া কার্যালয় রয়েছে তারও একটি তালিকা পাঠাতে বলা হয়। দলীয় সভাপতি স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের জন্যে আর্থিক অনুদান করবেন। কিন্তু উঠান বৈঠক ছাড়া অদ্যাবধি আর কোনোটাই করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঁদপুর ৩ (চাঁদপুর-হাইমচর) আসনের নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী আলহাজ রেদওয়ান খান বোরহান। তিনি সরকারের বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় উঠান বৈঠন-সামাজিক অনুষ্ঠান করে আসছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ, কৃষক লীগের নেতাদের সাথে নিয়ে তিনি এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসা ও হাট-বাজারে মতবিনিময়-আলোচনাসভা করে আসছেন। ইতিমধ্যেই স্থানীয় পর্যায় নেতারা নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী আলহাজ রেদওয়ান খান বোরহানের এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছেন। তার এই কার্যক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ড ও মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা গেছে ভিন্ন আমেজ। তৃণমূলের মানুষ নিয়ে আয়োজিত এসব উঠান বৈঠকে প্রতিদিনই শত শত নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজধানীর পাশ্ববর্তী জেলা নারায়নগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ও দিবস ভিত্তিক আলোচনাসভা করে আসছেন সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তিনি বলেন, সোনারগাঁও উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়নে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় উঠান বৈঠকে তিনি বলেন, যারা নৌকায় ভোট দেবে না তারা জাতীয় বেঈমান। একইসাথে সোনারগাঁ থেকে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দীয়া) আসনের নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং উঠান বৈঠক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঐসব উঠান বৈঠকে বর্তমান সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মানুষের মাথাপিছু আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন রকম উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরেন এবং আগামীতেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তরুন মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাড়া-মহল্লায় 'উঠান বৈঠকে' সাধারণ মানুষের কাছে ভোট প্রত্যাশা করছেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি পুত্র আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি দলীয় নির্দেশে বাড়ি বাড়ি ও পাড়া-মহল্লায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উঠান বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের মেলবন্ধন তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। উঠান বৈঠক প্রসঙ্গে আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। কেউ না খেয়ে থাকে না। এসব তথ্য তৃণমূলে পৌঁছে দিতেই আমি নিয়মিত উঠান বৈঠক করে আসছি। আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত উঠান বৈঠক অব্যহত থাকবে বলে জানান তিনি। একইভাবে সারা দেশজুড়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা উঠান বৈঠক করে আসছেন।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।