সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে আ. মতিন সরকার
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় চরাঞ্চলে নামে মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কর্মসূচি চলছে। এতে করে উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি কেবল সংশ্লিষ্ট বিভাগের নথি পত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। শিক্ষকরা বিদ্যালয় উপস্থিত থাকেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে মাসিক চুক্তিতে বদলী শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী দিয়ে।
সহকারী শিক্ষা অফিসারেরা কালেভদ্রে পরিদর্শনে গেলেও নিবিড় পরিদর্শনের অভাবে ওই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে করে চরাঞ্চলের বেশির ভাগ শিশু স্কুলে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে গোবাদিপশুর পরিচর্যাসহ ক্ষেত খামারে কাজ করে পিতা-মাতাদের সহযোগিতা করছে। উপজেলার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী ঘেষা কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা, তারাপুর চন্ডিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল গুলো সরে জমিনে ঘুরে দেখা গেছে ওই সকল এলাকায় গড়ে উঠা কম পক্ষে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন চিত্র যে বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা তাদেরকে এখনো উব্ধুদ্ধ করতে পারেনি। বেশির ভাগ শিশু হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় এদেরকে বিদ্যালয় মুখি করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না থাকায় চরাঞ্চলের অধিকাংশ শিশু স্কুলে ভর্তি হয় না। দারিদ্রতার করাল গ্রাসে একটু বড় হতে না হতেই এ সকল শিশু ঝাপিয়ে পড়ে আয় রোজগারের পথে। এরই ধারাবাহিকতায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ না করেই অকালে ঝড়ে পড়ছে। নাম আছে তবে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এছাড়া চরাঞ্চলের বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি একবারেই শূন্যের কোটায়। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের অস্তিত্বই মিলছে না। কর্মরত শিক্ষকরা সপ্তাহে ২/১ দিনের বেশি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। বদলী শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালিত করছেন। এদিকে স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা মাসিক ৩/৪ হাজার টাকার চুক্তিতে বদলী হিসেবে বিদ্যালয় গুলোতে পাঠদান করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা মাসে নামে মাত্র ২/১ দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। এভাবেই মাসিক রিপোট দাখিল করে বেতন ভাতাদি উত্তোলণ করে আসছেন। এ নিয়ে কথা হয় চরকাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লায়েক আলী খান মিন্টুর সাথে। তিনি জানান, তিন তিন বার তিস্তা নদীর ভাঙনে তার বিদ্যালয়টির অবকাঠামোসহ স্থানটি বিলীন হয়ে যায়। একারণে শিক্ষার্থী থাকলেও অবকাঠামোর স্থায়ীত্ব না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, কোন কোনা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষা অফিসারদের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিল বেতন ছাড় করা হলেও ৭টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভাতাটি স্থগিত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।