শিশু শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সহায়তা জরুরি
স্কুলে ঢোকার সময় নানা ঝক্কিতে পড়তে হয় শিশুশিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের। রিকশার জট, গাড়ির ভিড়, মোটরসাইকেলের বেতাল দৌড়, ফুটপাতে কর্মক্ষেত্র অভিমুখী মানুষের ব্যস্ততা-এসবের মধ্যেই স্কুলে ঢুকতে হয় শিশুদের; রাস্তা পারাপারেরর বিষয়ও রয়েছে। অভিভাবকদেরও একই দশা হয়। রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ স্কুলের সামনেই এ অবস্থা দেখা যায়। জেব্রাক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ নেই; ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় স্কুুলের সামনে কদাচিৎ ট্রাফিক পুলিশ থাকে। ফলে প্রতিটি স্কুল গেটের সামনেই দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটেও।
গত বছর রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন চলার সময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবির সূত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এসবের মধ্যে স্কুলের পাশে অন্তত দুজন ট্রাফিক পুলিশ রাখার কথা ছিল। তাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করা। স্কুলসংলগ্ন সড়কে স্পিড ব্রেকার ও জেব্রাক্রসিং রাখার কথাও বলা হয়েছিল। ১৭ দফা নির্দেশনায় ছুটি বা শুরুর সময় জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সহায়তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল।
বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ট্রাফিক পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানছে না। প্রয়োজনের সময় স্কুলের সামনে তাদের পাওয়া যায় না। স্কুল শুরুর মুহূর্তে কয়েক জায়গায় দেখা গেলেও তারা ব্যস্ত থাকে সড়ক সংযোগের যানজট সামলাতে। এটিও জরুরি কাজ, সন্দেহ নেই। কিন্তু শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার কাজটি তারা করছে না বা করতে পারছে না। শুধু স্কুল গেটে নয়, যেকোনো জায়গায়ই শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দরকার। গাড়িচালকদের সংবেদনশীল হওয়া জরুরি। তাহলে স্কুলে যাওয়ার পথে বা স্কুলে ঢোকার সময় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
স্কুলশিশুদের যাতায়াত ও সড়ক পারাপারে নিরাপত্তার বিষয়ে সব মহলেই উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ঝুঁকি নিয়ে শুধু আলোচনা হয়; ঝুঁকি হরাসের ব্যবস্থা হয় না। রাস্তা পার হওয়ার সময় অভিভাবকদের ট্রাফিক পুলিশ সাজতে হয়, ইশারা দিয়ে গাড়ি থামাতে হয়। এ কথা ঠিক, ট্রাফিক বিভাগের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। তবে আন্তরিকতা থাকলে নির্দেশনা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট ও বিএনসিসি সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে পারে তারা। স্কুলের সামনে গাড়িচালকদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। রাস্তা পারাপারের সময় শিশুদের সামলে রাখার জন্য অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। তারা কথা শুনেন না বলে ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগ। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সমাধান নেই। নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রাফিক বিভাগ দ্রুত সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে_এটাই আমরা দেখতে চাই।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।