একটি জাতীয় পত্রিকার ভুলে তোলপাড়
জীবিত মুক্তিযোদ্ধার ছবি মৃত বলে ছাপানোতে মাদারীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ
মাদারীপুর থেকে জাহাঙ্গীর কবির
গত ২২ ডিসেম্বর একটি জাতীয় পত্রিকার পক্ষ থেকে খলিলুর রহমান নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এ সম্মাননা দেয়া হয় । এই ১৬ জনের একজন হলেন খলিলুর রহমান। পত্রিকাটিতে গত ২৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, 'কমান্ডার খলিলুর রহমান (অব.) পাকিস্তানী আর্মিদের ফরিদপুর যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ান। মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয় গাড়ি। লড়াই চলে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওইদিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানী
সেনা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।'
পত্রিকায় সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যদের ছবি ছাপা হলেও এই খলিলুর রহমানের ছবি ওইদিন ছাপা হয়নি। এমনকি তার বিস্তারিত ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়নি। পাশাপাশি খলিলুর রহমান কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিংবা কোথায় পাকবাহিনীর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তার কোনো বর্ণনা দেয়া হয়নি। একই পত্রিকায় গত ২৫ ডিসেম্বর ওই খলিলুর রহমানের চিকিৎসার আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানেও এই খলিলুর রহমানের বর্তমান কিংবা স্থায়ী কোনো ঠিকানা দেয়া হয়নি। ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে খলিলুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তার চিকিৎসার জন্য ওই পত্রিকার পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়। ১০ জানুয়ারি বুধবার পত্রিকাটির ১১ পৃষ্ঠায় তার মৃত্যুর খবর ছাপা হয়। সেখানে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে মাদারীপুরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন ও খলিল বাহিনীর প্রধান খলিলুর রহমান খানের। গতকাল বৃহস্পতিবার পত্রিকাটির ২য় পৃষ্ঠায় একটি ভুল সংশোধনী ছাপা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেছে অনেক কিছু। ১০ জানুয়ারি ছবিসহ প্রকাশিত খবরটি নিয়ে মাদারীপুরসহ সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খানের মোবাইল ফোনে অনর্গল ফোন আসতে থাকে। অনেকেই পত্রিকায় ছবিসহ খবরটি দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসতে থাকেন আত্মীয়-স্বজন। এ নিয়ে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মাদারীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পাক হানাদার বাহিনী ফরিদপুর যাত্রায় যিনি বাধা হয়ে দাঁড়ান এবং মাইন দিয়ে গাড়ি উড়িয়ে দেন, পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধ শেষে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকসেনারা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে যার কাছে; তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন মাদারীপুর 'খলিল বাহিনী' প্রধান মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান।' তিনি আরো বলেন, বৃহত্তর ফরিদপুরে পাকবাহিনী একমাত্র মাদারীপুর জেলাতে সম্মুখযুদ্ধের পরে খলিল বাহিনী প্রধান খলিলুর রহমান খানের কাছে আত্মসর্মপণ করে। ১৯৭১ সালে যে খলিল বাহিনীর নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মাদারীপুরের বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে পত্রিকাটি তাকে নিয়ে উপহাস করেছে। এ ব্যাপারে খলিল বাহিনীর প্রধান খলিলুর রহমান খান বলেন, 'আমাকে সম্মাননাও দেয়া হয়নি, এমনকি আমি এখনো মারাও যাইনি। তবে, কেন আমার ছবি ব্যবহার করে এমন মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হলো? আর কেনই বা আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হলো? তাহলে কি ওই দৈনিক পত্রিকাটি কারো সুবিধার্থে দেশ ও জাতিকে কলঙ্কিত করলো?'
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।